নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজানে রাতের খাবার দেওয়া হয় দিনে, নেই আলাদা ইফতারের জন্য আলাদা বরাদ্দও। ঢাকার বেশির ভাগ সরকারি হাসপাতালে চলছে এই অবস্থা। রাতের খাবার দিনে দিলে তা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে রাতেই খাওয়ার উপযোগী থাকে না। সেহরির সময় তো খাওয়াই যায় না। এ ছাড়া অনেক হাসপাতালে নিরাপদ পানির সরবরাহ নেই। রয়েছে নিয়মিত খাবার বিতরণে নানা অবহেলারও অভিযোগ। রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ঘুরে রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে এ তথ্য মিলেছে। এদিকে হাসপাতালের বাইরের ফুটপাতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি ইফতার কিনছেন রোগীর স্বজনরা। এতে তাদের নানা সমস্যাও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী ও তাদের স্বজনরা জানান, রমজানের আগের নিয়মেই এখানো খাবার দেওয়া হয়। এতে সন্ধ্যার আগে রাতের খাবার দেওয়ায় নষ্ট হয়ে যায়। ক্যান্টিনেও ঠিকমতো খাবার পাওয়া যায় না। তাই বাধ্য হয়ে রুটি, কলা খেয়ে রোজা রাখতে হয়। নেই নিরাপদ পানির ব্যবস্থাও। রোগীর স্বজনদের প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ লিটার পানি বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে কিনতে হয়। ওই হাসপাতালের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ১১৯ নম্বর শয্যার রোগী বিবি হনুফা। তার স্বজন হালিমা খাতুন জানান, ছয় দিন ধরে এসেছেন। প্রতিদিন ইফতার ও সেহরির খাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসেন। হাসপাতাল থেকে ইফতার ও সেহরি দেওয়া হয় না। গত মঙ্গলবার শ্বাসকষ্টজনিত রোগে কেরানীগঞ্জ থেকে এসেছেন হাফিজ উদ্দিন। তিনি ১নং ওয়ার্ডের ৫১ নম্বর শয্যায় আছেন। তার স্বজনরা ইফতারির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তারা সব কিছু বাইর থেকে কিনে এনেছেন। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৪ নম্বর শয্যায় রোগী গত শুক্রবারে ভর্তি হয়েছেন। তার স্বজন আলম মিয়া জানান, হাসপাতালে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা না থাকায় কিনে এনেছেন। সেহরির সময়ও ক্যান্টিনে খাবার পাওয়া যায়নি।
অনারারি মেডিক্যাল অফিসার ডা. তারেক মো. মনিরুল ইমলাম এ ব্যাপারে বলেন, হাসপাতালে নিরাপদ পানি, ভালো মানের ইফতার, সেহরির ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজরের অভাব রয়েছে।
হাসপাতালের টিকিট মাস্টার গোলাম মোস্তফা বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব পাম্পে পানি ওঠে। এ পানি শতভাগ নিরাপদ। পানির রাখার জার প্রতিনিয়ত পরিষ্কার করা হয়। আমরা টয়লেট ও কিচেন রুমের পানি খাই। কিন্তু রোগী ও তাদের স্বজনরা কোনোমতেই তা বিশ্বাস করেন না।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ক্যান্টিনের সহকারী ব্যবস্থাপক সবুজ মিয়া জানান, রোজার মাসে বেচা-বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। সাধারণ খাবারের সঙ্গে ইফতার ও সেহরির ব্যবস্থা আছে। সেহরির জন্য রাত ২টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত ক্যান্টিন খোলা থাকে। তবে লোকজন বেশি থাকলে একটু-আটটু ঘাটতি পড়ে।
অনারারি মেডিক্যাল অফিসার ডা. এস এম সোবাহান বলেন, রাতের বেলা ডাক্তারের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি থাকে। এ কারণে সেহরির সময় সমস্যায় পড়তে হয়। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সামনে কথা হয় রোগীর স্বজন আফজালের সঙ্গে। তিনি জানান, রোগী হৃদরোগে আক্রান্ত। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে সাত দিন ভর্তি আছেন। প্রতিদিন এখান থেকে ইফতার কিনেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র দেখা গেছে। সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ফুটপাত থেকে তৈরি ইফতার কিনছেন স্বজনরা।