মাহাবুবুর রহমান: প্রবিত্র কোরবানীর ঈদে কিনা চামড়া এখনো বিক্রি করতে পারে নি ব্যবসায়িরা। এতে চামড়া কিনা আর সংরক্ষনের খরচ মিলিয়ে আরো বেশি টাকা যোগ হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে চামড়া ব্যবসায়িরা। তাদের দাবী চট্টগ্রাম ও ঢাকার ট্যানারি ব্যবসায়িরা চামড়া কিনতে আগ্রহী না। আগে তারা আমাদের সাথে চামড়ার জন্য যোগাযোগ করতো এখন আমরা যোগাযোগ করেও চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। তাই বিপুল টাকা লোকসান হবে সেটা নিশ্চিত। তাদের দাবী একটি মধ্যস্বত্ত ভোগী এবং সরকারের একটি পক্ষ বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে নিয়ে গেছে।কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের পার্শবর্তি চামড়ার আড়তদার রিয়াজউদ্দিন বলেন আমি এবারে ১৬/১৭ লাখ টাকার চামড়া সংগ্রহ করেছি তার মধ্যে ১৬০০ গরুর চামড়া, ১৭০০ খাসী ও ভেড়ার চামড়া। আসা করেছিলাম এসব চামড়া বিক্রি করে কিছু টাকা লাভবান হবো। কিন্তু মনে হচ্ছে চিন্তার বাইরের বেশি টাকা লোকসান হবে, কারন এখনো পর্যন্ত ঢাকা বা চট্টগ্রামের কোন আড়তদার আমাদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে আগ্রহ দেখাই নি। আগে তারা আমাদের কাছে খবর নিত চামড়া আছে কিনা বা কি দামে বিক্রি করবো এখন প্রবিত্র কোরবানের ঈদের পর থেকে কয়েক বার আমি নিজে ফোন করেও কোন আসা পায়নি। তার উপর এত দিন চামড়া সংরক্ষণ করতে গিয়ে খরচ আরো বেড়েছে। আর এবার লবনের দাম অস্বাভাবিক বেশি আগে প্রতিমন লবনের দাম ছিল ১০০/১৫০ টাকা কিন্তু এবার সেই লবন কিনতে হয়েছে ৩৫০/৪০০ টাকায় পরে পরে নাকি আরো দাম বেড়েছে। এছাড়া কর্মচারীদের দামও অনেক বেশি সব মিলিয়ে খরচও পোষাতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না। আরেক চামড়া ব্যবসায়ি বাংলাবাজার এলাকার ফকির মোহাম্মদ বলেন আমরা মাঠ পর্যায় থেকে একটি চামড়া ৫০০/৬০০ টাকা দরে সংগ্রহ করেছি সংরক্ষন খরচ সহ সেই চামড়া এখন ১০৫০ টাকা পড়েছে আসা করিছিলাম ঢাকাতে তা ১৫০০/১৭০০ টাকা বিক্রি করে কিছু লাভবান হবো কিন্তু সেই আশা পূরণ হবে না, তার উপর পাওনাদার রা এখন টাকার জন্য আসছে তাদেরও টাকা দিতে পারছি না। এতে আমাদের অবস্থা খুবই করুন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন মূলত ঢাকাতে ট্যানারী মালিকরা স্থির না হওয়ায় চামড়া নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। তারা চামড়া না কিনলে আমাদের দেশ ত্যাগ করা ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। আর এ পর্যন্ত ঢাকার ব্যবসায়িরা চামড়া কিনতে কোন প্রকার আগ্রহ দেখায় নি। আগে চামড়া জন্য আমাদের কাছে তারা র্ধণা দিত এখন আমরা বার বার ফোন করেও কোন ফল পাচ্ছি না। তার মতে বাংলাদেশ চামড়া ব্যবসা ধ্বংস করার জন্য দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র কারীরার উঠে পড়ে লেগেছে এটা তারই প্রভার। আমরা মানুষ কম শিক্ষিত হলেও যতটুকু শুনেছি বিশ্ববাজারে চামড়ার চাহিদা ঠিকই আছে এবং প্রতি ইি চামড়ার দাম তারা আগের ছেয়ে বাড়িয়েছে তাহলে আমাদের দেশে কেন চামড়ার দাম বছর বছর কমে ? অথচ বিশ্বের মধ্যে আমরাই চামড়া উৎপাদনকারী শীর্ষদেশ। আর আমরাই চামড়া নিয়ে পথে পথে ঘুরছি। আরেক চামড়া ব্যবসায়ি ওসমান গনি বলেন আমরা ঈদের দিন ৫ লাখ টাকার মত খুচরা চামড়া সংগ্রহ করেছিলাম একেবারে প্রান্তিক বাড়ি থেকে আমরা ৫০০ টাকা দিয়ে চামড়া কিনেছি সন্ধ্যায় সেই চামড়া কিনতে চাইছে ৪৫০ টাকা দিয়ে অর্থাৎ নগদের ৭০ হাজার টাকার লোকসান। পরে গভীর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোন মতে ১৫ হাজার টাকার লোকসানে চামড়া বিক্রি করেছি। পরে আমরা কয়েক জন মিলে ঢাকায় বিক্রি করার জন্য ৭ লাখ টাকার মত চামড়া সংগ্রহ করেছি আসাছিল সেখানে কিছু চামড়া বিক্রি করে লাভবান হবো এখন দেখছি একটি চামড়া বিক্রি করতে পারিনি। মনে হচ্ছে সেখানেও বিপুল টাকা লোকসান হবে। তার মতে একটি মধ্যস্বত্ত ভোগী ও সরকারের একটি অংশ চামড়া শিল্পকে ধ্বংশের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে। চামড়াকে কিছুদিনআগেও স্বর্ণ মনে করা হতো অথচ এখন সেই চামড়াকে ফিরেও তাকাচ্ছে না মানুষ। আর আমাদের ট্যানারী গুলোকেও নানান ভাবে এখন জিম্মি করে ফেলা হয়েছে। আমার জানা মতে অনেক ট্যানারী মালিক এখন ব্যবসা ছেয়ে দিয়েছে। তাদের ট্যানারী বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। তাই চামড়া নিয়ে আমাদের পথে বসা ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না। আর দিন দিন এ কাজে লোকজন কমে আসছে আমার মতে এ অবস্থা চলতে থাকলে একদিন পাট যেমন সোনালী আশঁ হিসাবে বইয়ের পাতায় ছাড়া কোথাও স্থান নেই চামড়া ও এক সময় বইয়ের পাতায় ছাড়া দেখা যাবে না। আর আমি বুঝতে পারি না ভারতে চামড়ার দাম বাড়তে থাকলে শ্রীলংকা নেপাল এমন কি ভুটানের চামড়া দাম দিন দিন বাড়লে আমাদের কেন এ অবস্থা ? আসলে বিষয় টি কি সেটা খুজে বের করা দরকার। এদিকে রামু উখিয়া, চকরিয়া সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় যোগাযোগ করে দেখা গেছে ঈদের সময় সংগ্রহ করা চামড়া এ পর্যন্ত একটি বিক্রি করতে পারে নি ব্যবসায়িরা।
ঢাকাতে চামড়া কিনছে না : দিশেহারা স্থানীয় ব্যবসায়ীরা
September 29, 2016