ডিসেম্বরের মধ্যে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা

একাত্তলাইভ ডেস্ক: ১৯৯৬ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সকল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুসরণ করার নির্দেশনা প্রদান করে।সে নির্দেশনার আরো ১০ বছর পর এ সংক্রান্ত আইন করা হয়। নির্দেশনার ২০ বছর পার হয়েছে। কিন্তু এখনো বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন আলোর মুখ দেখেনি।এ কারণে সারাদেশে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে ভবন। আর অপরিকল্পিতভাবে ভবনগুলো তৈরি হবার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে অবকাঠামোগত ঝুঁকি।সর্বশেষ, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সকল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করার নির্দেশনা প্রদান করে। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৬ সালে সরকার এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আইনি বাধ্যবাধকতার পরও বিল্ডিং কোডটি বাস্তবায়ন হয়নি। তাই হাইকোর্ট আইনটি বাস্তবায়নের জন্য ২০১০ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে এক বছরের সময় বেঁধে দেন। তারপর প্রায় ছয় বছর অতিক্রম হলেও এখনো বাস্তবায়িত হয়নি আইনটি।এদিকে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার পর আইনটির (বিল্ডিং কোড) মূল্যায়ন করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন না করেই ২০১৫ সালে আবার গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাধীন প্রতিষ্ঠান হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আরো কিছু পরিবর্তন আনে এবং এর অনুমোদনের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করে। এটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য রয়েছে। ভেটিং হবার পরেই আইনটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানায় সূত্রটি। তবে এটি কবে নাগাদ হতে পারে তার সঠিক সময় জানা যায়নি।তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন গত ২৯ সেপ্টেম্বর এক আলোচনা সভায় বলেছেন, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই বাস্তবায়ন হবে ভবন নির্মাণ বিধি (বিন্ডিং কোড) এবং কোড অমান্য করে যারা বিল্ডিং তৈরি করবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তবে আজ পর্যন্ত এই আইনটি যে বাস্তবায়নই হয়নি সে বিষয়ে তার জানা ছিল না বলেও স্বীকার করেন তিনি।যে বিল্ডিং কোড গত ২০ বছরেও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা গণপূর্ত মন্ত্রীর কথা অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আদৌ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে কি না, সে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন বিষয়ে ‘বিল্ডিং কোড মূল্যায়ন কমিটি’তে কাজ করা বুয়েটের অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বাস্তবায়ন না করলে আইন বা মূল্যায়ন করে কোনো লাভ নেই। আমরা প্রযুক্তি ও অবকাঠামো এবং চাহিদার কথা মাথায় রেখে আইনে কিছু সংযুক্তি দিয়েছি। তবে সেটি বাস্তবায়নের মুখ দেখবে কি না জানি না।’একই বিষয়ে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ফলে নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে। বেশির ভাগ অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে অপরিকল্পিতভাবে। মানা হচ্ছে না নিয়মকানুন।’বিশেষজ্ঞদের মতে, বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন না হওয়ার মূল কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। সিটি করপোরেশন, রাজউক, পৌরসভা কিংবা স্থানীয় সরকার প্রশাসনের নিজস্ব কিছু নিয়ম আছে। তার সঙ্গে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন কাঠামো প্রণয়ন করে ও একটি সমন্বিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারলে অতি শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব।এ ছাড়া একটি সহজ ও ছোট গাইডবুক তৈরি করতে হবে। যাতে একজন সাধারণ মানুষ বিল্ডিং তৈরি করার সময় সহজেই ন্যূনতম বিষয়গুলো জানতে ও মানতে পারেন। বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিক অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম হাতে নেওয়া ও বিদ্যালয়কেন্দ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিল্ডিং কোডের বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে বলেও সুপারিশ করেন বিশেষজ্ঞরা।ঢাকা শহরে এখন আনুমানিক ২ কোটি লোক বসবাস করে। তাদের বসবাসের জন্য এখানে নিয়ম না মেনে প্রয়োজনীয় খালি জায়গা না রেখে অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন ভবন তৈরি করা হচ্ছে। এমনিতেই বাংলাদেশে ভৌগলিক অবস্থানের কারণেও ভূমিকম্পের মতো বড় দুর্যোগে বড় ক্ষয়ক্ষতি হবার আশঙ্কা রয়েছে। যদি বড় কোনো ভূমিকম্প বা অন্য বড় দুর্যোগ হয় তবে আমারদের পরিস্থিতি খুবই ভায়বহ হবে।উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড বাংলাদেশের ভবন নির্মাণবিষয়ক একটি বিধিমালা, যা নগরকেন্দ্রিক জনগণের কাঠামোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা।