একাত্তরলাইভডেস্ক: ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট। সেই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভ করে।
এরপর একই বছর ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দেশ এগিয়ে গেলেও দলের জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা কার্যালয়গুলোতে লাগেনি ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। এখনো এনালগ সিস্টেমেই মুখ থুবড়ে আছে।
দলের কার্যালয়গুলো ডিজিটাল সিস্টেমের আওতাভুক্ত করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নেতাদের কোন দৃশ্যামন ও কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। খোদ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ইচ্ছা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আহ্বান সত্ত্বেও তৃণমুল নেতাদের মাঝে এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখা যায়নি।
সারাদেশে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কার্যালয়ে ডিজিটাল সিস্টেমের কার্যক্রম নিয়ে জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও নেতাদের সাথে কথা বলে এই চিত্র ফুটে উঠছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সাংগঠনিক তথ্য ভা-ারের কাজ শেষ করতে সব ইউনিটের নেতাদের কাছে পুনরায় তথ্য চেয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দলীয় পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সংগঠনের সকল স্তরের দায়িত্বশীল নেতাদের কাছে তিনি ওই আহ্বান জানান। এই চিঠি সেদিন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের বরাবরে পাঠানো হয়েছিল। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছিলেন দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকারের প্রধান নির্বাচনী অঙ্গীকার তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গঠন করা। এ লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, জেলা/মহানগর কমিটি, উপজেলা-থানা কমিটি, পৌর-ইউনিয়ন কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে একটি সাংগঠনিক তথ্য ভান্ডার (ডাটাবেজ) তৈরি করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি এর আগে আপানাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। এই কার্যক্রম সফল করতে সব ইউনিটের নেতাদের নাম, ঠিকানা, ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, কমিউনিটি পোর্টাল নিবন্ধন ফরম (আরইসিপি) আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে পুনরায় পাঠানোর অনুরোধ করা হচ্ছে।
এর আগে জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করা হবে বলে জানান। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর পুনরায় সরকার গঠন করলে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩/এ কার্যালয়সহ কেন্দ্রীয় এবং সারাদেশে জেলা অফিসগুলো মনিটর করার ইচ্ছা পোষণ করেন। এজন্য সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় ডিজিটাল করার পাশাপাশি দলের বিভিন্ন কমিটি ডাটাবেজের আওতায় আনারও জোরদার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ওই সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়কে ফ্রি ওয়াইফাই জোন চালুর পাশাপাশি সকল কক্ষে কম্পিউটারের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বলা হয়। একই সঙ্গে দলীয় কর্মীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, ওই সময় সভাপতির কার্যালয় ডিজিটাল প্রক্রিয়ার আওতায় আনার পর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কার্যালয় ডিজিটাল প্রক্রিয়ার আওতায় আনার কথা ছিল। এরপর সারাদেশের সাংগঠনিক জেলা অফিসগুলোকে ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছিল। কারণ, দলীয় সভাপতি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে বসেই যাতে নিজস্ব রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং জেলার দলীয় অফিসগুলোর খোঁজ খবর সব সময় নিতে পারেন সেই লক্ষ্যেই ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু সারাদেশে দলীয় নেতাদের উদ্যোগের অভাব ও সমন্বয়হীনতার কারণে ডিজিটাল করার উদ্যোগও মুখ থুবড়ে পড়ে।
কার্যালয় ছাড়াই লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগ
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠনের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দলের কোনো স্থায়ী কার্যালয় নেই। তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে কার্যালয় ছাড়াই। সংশ্লিষ্ট নেতারা কার্যালয় স্থাপন করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছেন। জেলা নেতাদের বাসভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চলছে দলীয় কর্মকা-। এজন্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়নের নিজস্ব বাসভবনের একটি অংশকে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নে সরকার এগিয়ে গেলেও ক্ষমতাসীন দল হিসাবে লক্ষ্মীপুরে একটি আধুনিক রাজনৈতিক কার্যালয় স্থাপন বা ডিজিটালাইজড বলতে কিছুই নেই। জেলা আ.লীগের নামে ফেসবুক পাতা থাকলেও সেটি অকার্যকর। নেই নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানা।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক স্থায়ী দলীয় কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। জায়গা নির্বাচন করা হচ্ছে। শিগগিরই দলীয় কার্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের এবং জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান এ কে এম সালাহ্ উদ্দিন টিপু তাদের নিজস্ব অর্থায়নে শহরের তমিজ মার্কেটে একটি ভবন নির্মাণ করেছেন। সেখানে বিশেষ করে জেলা যুবলীগের দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আ. লীগের কয়েকজন নেতা জানান, বর্তমানে দেশে জনগণের উন্নয়নের জন্য যে আদর্শিক রাজনীতি তা বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এখন দেশের চাইতে নিজের আখের গোছাতেই বেশি ব্যস্ত থাকেন নেতারা। যখন যে দল ক্ষমতায় আসে তখন জনগণের চাইতে সে দলের নেতাদের নিজেদেরই উন্নয়ন হয় বেশি, এটাকেই স্বাভাবিক ভাবছেন সাধারণরা। আর একই কারণে এখনও দলীয় কার্যালয় হয়ে ওঠেনি বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আ.লীগের উন্নতি বলতে কম্পিউটার কম্পোজ
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে আলোচিত শব্দের নাম ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’। সরকার দেশকে ডিজিটাল করতে স্কুল কলেজ পর্যায়েও ওয়াইফাই চালু করেছে। প্রশংসাও কুড়িয়েছে অনেক। কিন্তু ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে ফেসবুকেও নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের নাম! আর উন্নতি বলতে হাতে লেখার পরিবর্তে এখন করা হয় কম্পিউটারে কম্পোজ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রের সাথে জেলার যোগাযোগে ই-মেইল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এ কাজের জন্য দলীয় কার্যালয়ে রয়েছে একটি কম্পিউটার। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কম্পিউটার কম্পোজের কাজটি বিভিন্ন স্থানে হয়ে থাকে। জেলা আওয়ামী লীগ থেকে উপজেলা পর্যায়ে চিঠি চালাচালি কিংবা অন্যান্য তথ্য আদান প্রদান করা হয় ডাক বিভাগের মাধ্যমে কিংবা মোবাইল ফোনে।
তবে দলীয় নেতাকর্মীদের অনেকেই ফেসবুক, ইমু ও নানা অ্যাপস ব্যবহার করে থাকেন। সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হকের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। পরে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকতে দেখা গেছে জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাদের। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাক্তিগত একাউন্ট খোলার দিক দিয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের থেকে পিছিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, অফিসে কম্পিউটার থাকলেও কাজ হয় না। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুবিধাজনক জায়গায় বসে কম্পোজ করে ডাকযোগে চিঠি পাঠান। ডিজিটাল সেবার কিছুই নেই এখানে। নেই ফেসবুক আইডিও।
বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে কম্পিউটার রয়েছে। তাছাড়া ই-মেইল এবং ফ্যাক্স করার ব্যবস্থা আছে। জেলা নেতাদের সবারই ব্যাক্তিগত ই-মেইল রয়েছে। ফলে চিঠি দেওয়ার সময় ই-মেইলের ব্যবহার হয়। কেন্দ্র থেকে সব নির্দেশনা জেলায় ই-মেইলেই আসে। জেলা আওয়ামী লীগের একটি ফেসবুক আইডিও রয়েছে তবে তা আপডেট হয় না।
আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহবায়ক মনির হোসেন বাবুল বলেন, ‘জেলা থেকে চিঠিপত্র ডাকযোগে অথবা ব্যক্তি বাহকের হাতে আমাদের কাছে পৌঁছানো হয়। তবে দলীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যেমন কাউকে বহিস্কার করার মতো ঘটনা থাকলে তা রেজিষ্ট্রার ডাক যোগে পাঠানো হয়। এতে অনেক সময় এক দুই দিন সময়ও লেগে যায়। যদি আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হতো তাহলে আমাদের কার্যক্রমে আরো গতি আসতো।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শুধু কেন্দ্রের সাথে আমাদের ই-মেইল যোগাযোগ রয়েছে। অনেক উপজেলায় আমাদের অফিস নেই। ফলে যোগাযোগে সমস্যা হয়। তবে আমাদের পুরো কার্যক্রমকে ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিগগিরই তা বাস্তবায়ন করা হবে।’
বরিশাল জেলা ও মহানগর আ.লীগে নেই ডিজিটাল ছোঁয়া
আধুনিকতা আর ডিজিটাল ব্যবস্থার ছোঁয়া লাগেনি বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে। বিগত দিনের চির চেনা নিয়মে কাগজে হাতে লেখা প্রেস বিজ্ঞপ্তি কিংবা নোটিশ দেওয়ার মধ্য দিয়েই চলছে এ কার্যলয়ের কার্যক্রম। ২০টি প্লাস্টিকের চেয়ার আর একটি টেবিল ও দুটি কাঠের আলমিরাই এই কার্যলয়ের সম্বল।
সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলেও পূর্বের মতই কার্যলয়ের মূল তদারকী করছেন এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুস এমপি এবং মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। তাদের দেওয়া অর্থ দিয়েই কার্যলয়ের তালার চাবি রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মীকে ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়া কার্যালয়টির ভাড়া কিংবা বিদ্যুৎ অথবা পানি’র বিল পরিশোধ কখনও করা হয়েছিলো কিনা তারও কোন তথ্য তাদের জানা নেই। পুরো খরচ বহন করছে বরিশাল সিটি কপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
দলীয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ডিজিটাল ব্যবস্থার উপর জোর দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপের ব্যবহার ও ইন্টারনেটের সংযোগ বাড়ানোর কথা বলেছেন। বরিশালের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও রয়েছে আধুনিক এ ডিজিটাল ব্যবস্থা। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো এখনো আধুনিকতা আর ডিজিটাল ব্যবস্থার ছোঁয়া লাগেনি বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। দলীয় কোন অনুষ্ঠানের দিন ছাড়া বলতে গেলে সব দিনই এ কার্যালয় বন্ধ থাকে। তাই নেতা-কর্মীদের আনাগোনাও কম থাকে। যেখানে খরচ বহনের কেউ নেই, সেখানে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু দূরে থাক কার্যলয় সংস্কারেরও কোন উদ্যোগ নেই। এখানে নেই কোন কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ।
আগের মতই কাগজে হাতে লেখা প্রেস বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যম অফিসে পাঠানো হচ্ছে। কখনো কখনো দলীয় প্যাড ছাড়াই শুধু সাদা কাগজে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ঘটনাও ঘটছে।
ওয়েবসাইট দূরের কথা, বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একটি মেইল ঠিকানাও নেই।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা লস্কর নূরুল হক জানান, মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ মেয়র থাকাকালীন ২০০৯ সালে সিটি কর্পোরেশনের এনেক্স ভবনের নিচ তলার এই কার্যালয়টি ভাড়া হিসেবে আমরা বরাদ্দ পাই। তখন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুচ ও মহানগর সভাপতি শওকত হোসেন হিরনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় এই অফিসের আসবাবপত্রও কেনা হয়। এরপর এই অফিসে আর কোন আসবাবপত্র কেনা হয়নি এবং সংস্কারও হয়নি।
তবে সম্প্রতি ৫ আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর ১৪ দলের সমন্বয়ক জেবুন্নেছা আফরোজ তিনটি ফ্যান দিয়েছেন। উদ্যোগ ও অর্থের অভাবে ওই ফ্যানও চালু করা যায়নি।
মহনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুল করিম জানান, ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করাটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই কার্যলয়টি অধুনিকায়নের জন্য অর্থিক সহযোগিতা চেয়ে ইতোমধ্যে কেন্দ্রে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বরিশাল বিভাগীয় নগরী। আর এই নগরীর প্রাণ কেন্দ্রেই বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যলয়। কিন্তু এই কার্যলয়টি সিটি কপোরেশনের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া। তবে ভাড়ার বিষয়ে সিটি করপোরেশন থেকে কোন নোটিশ আসে না বিধায় পরিশোধও করা হয় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা পরিষদের কাছ থেকে নগরীর অভিরুচি হলের বিপরীতে ৫ দশমিক ২৬ শতক জমি জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যলয়ের জন্য লিজ নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন মহানগর সভাপতি প্রয়াত শওকত হোসেন হিরন ও বর্তমান জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সেখানে ভবন নির্মাণেরও উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে শওকত হোসেন হিরন মারা যাওয়ায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। তাই স্থায়ী ভবন নির্মাণ করা হলে সব ধরনের ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে।’
এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুচ এমপি বলেন, ‘বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। শিগগিরই বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যলয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালুর প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর পৃথক সম্মেলনের মাধ্যমে জেলা পর্যায়ে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে সভাপতি ও তালুকদার মো. ইউনুচকে সাধারণ সম্পাদক কমিটি গঠন করা হয়। আর শওকত হোসেন হিরণকে সভাপতি করে এবং আফজালুল করিমকে সাধারণ সম্পাদক করে মহানগর আওয়ামী লীগের সংক্ষিপ্ত কমিটি গঠিত হয়। ২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল মহানগর সভাপতি শওকত হোসেন হিরণ মারা যাওয়ার পর এখন একজনকে নিয়েই মহানগর কমিটি রয়েছে। অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগে সম্প্রতি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হলেও কার্যালয়ে আসা যাওয়া করতে দেখা যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মোহাম্মাদ ইউনুচ এমপিকে। মহানগর সভাপতি শওকত হোসেন হিরণের মৃত্যুর পর জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজেকে মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করলেও কার্যালয়ে ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করার কোন উদ্যোগ নেননি।