ট্রাইব্যুনাল সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে: আইন মন্ত্রণালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক:
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য স্থাপিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালটি না সরানোর বিষয়টি দ্বিতীয় বারের মতো পুনর্বিবেচনার জন্য সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে সরকার। চিঠিতে বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনাল সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে।

বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত চিঠি সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে পাঠানো হয়েছে।

আইন ও বিচার বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব কাজী মুসফিক মাহবুব রবিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যক্রম বন্ধ করে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটির দখল সুপ্রিমকোর্টের অনুকুলে হস্তান্তর করা হলে তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে সর্বজনগ্রাহ্য হবে না বরং সুপ্রিমকোর্ট দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হবে।  ফলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করে সুপ্রিমকোর্টের অনুকূলে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের দখল হস্তান্তর করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আপনাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এরআগে গত ২৩ আগস্ট এবং ৪ ডিসেম্বর দুই দফায় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন পুরাতন হাইকোর্ট এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র সরিয়ে নিতে আইন মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায়। প্রথম চিঠিতে ৩১ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় চিঠিতে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপ্রিমকোর্টের পুরাতন ভবনটি হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। সর্বশেষ মেয়াদের দুইদিন আগে বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রণালয় থেকে জবাব পাঠানো হয়।

আইনমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ সমুহের সঙ্গে জড়িত রাজাকারদের বিচার করতে বর্তমান সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধারাবাহিকতায় অন্য কোথাও স্থান না পাওয়ায় সরকার শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের পুরাতন ভবনটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এই ট্রাইব্যুনাল অনেক কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার কাজ শেষ হয়েছে। সে কারণে এ ভবনটি ঐতিহ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণ চায় যে, এ ভবনটি ঐতিহাসিক ভবন বিধায় সে মর্যাদাকে সমুন্নত রেখে ভবনটি সংরক্ষণ করা হোক এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখান থেকে সরানো না হোক। এটা সরানো হলে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হবে এবং দেশের সঠিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতার ক্ষেত্রে এ স্থানান্তর প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি করবে।’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের  বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। ওই ভবনে আইন কমিশন ও জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের অফিস ছিল। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে প্রথমে একটি ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২২ মার্চ মাসে আরও একটি বেঞ্চ স্থাপন করা হয়। গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দুটি বেঞ্চ ভেঙ্গে একটি করা হয়। শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে বেশীর ভাগ বিচার শেষ হওয়ায় সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।

গত ছয় বছরে এই ট্রাইব্যুনালে ২৭টি মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ জন শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।