মাহাবুবুর রহমান: সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে মসলা জাতীয় আমদানীকৃত ফসল “গোলমরিচ” চাষ করে এক কৃষক রীতিমত হৈ চৈ ফেলে দিয়েছেন। হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চাকমাপল্লীর কৃষক মনি স্বপন চাকমা গোলমরিচ ক্ষেতে সফলতার মুখ দেখে বাণিজ্যিকভাবে বৃহতাকারে এখন চাষাবাদ করতে যাচ্ছে। আধিবাসী এই কৃষকের সফলতা দেখে উপজেলার অনেক কৃষক/কৃষাণী এবারে গোলমরিচ চাষের চিন্তাভাবনা করেছন। অল্প খরচে অধিক টাকা আয় করা সম্ভব বলেই কৃষকরা গোলমরিচ চাষে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। কীটনাশক ছাড়া উৎপাদিত দীর্ঘ মেয়াদী ফসল গোলমরিচ সীমান্তের কৃষকদের নতুন চাষাবাদ হলেও মনি স্বপন চাকমা দেখিয়ে দিলেন কৃষকের পক্ষে সবকিছুই করা সম্ভব। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের কারিগরী সহায়তা দিলেই টেকনাফের মাটিতে সবধরণের ফসলের চাষ করা যেতে পারে। সফল এই কৃষক টেকনাফ বনা লের ন্যাড়া পাহাড় সমূহ পরিকল্পিত ভাবে চাষাবাদের আওতায় আনার উপর গুরুত্বারোপ করে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, ধ্বংসের মুখে পড়া সংকুচিত বনা ল কৃষকদের লীজ প্রদানের মাধ্যমে “কৃষিজোনে” পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্যিক উপায়ে উপজেলাজুড়ে ব্যাপকহারে গোলমরিচ চাষাবাদ করা গেলে এখান থেকেই পুরো দেশে মসলা/গোলমরিচের চাহিদা পূরণ করা যাবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহযোগীতা ফেলেই গোলমরিচের চাষ করে কৃষকরা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে বলে গ্রামীণ কৃষকরা দৈনিক কক্সবাজারকে জানিয়েছেন। সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা গেছে, কৃষক মনি স্বপন চাকমা ৩বছর আগে মিয়ানমার থেকে শাখা কলম/কাটিং এনে বসতভিটায় গোলমরিচ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তাঁর বসতভিটায় রোপিত শতাধিক গোলমরিচ গাছে ফলন দিচ্ছে। বছরে একবারই এই ফসল সংগ্রহ করা যায়। কৃষকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, সাধারণত বর্ষা মৌসুমে গোলমরিচের শাখা কলম/কার্টিং রোপন করতে হয়। বর্ষার পর পরই অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ফসল সংগ্রহ করে বাজারজাত করা যায়। এই চাষে আলাদা কোন জমির দরকার হয় না। বসতভিটায় রোপিত সবধরণের বৃক্ষারাজির গোড়ায় শাখা কলম/কাটিং রোপন করে দিলেই সহজে গাছ বেয়ে লতায় পরিণত হয়ে এক বছরের মধ্যে ফলন দেয়। এতে অন্য গাছের কোন সমস্যাও হয়না। প্রথমদিকে প্রতি গাছে থেকে ১কেজি ফসল সংগ্রহ করা যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ৫-১০কেজি পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যেতে পারে। প্রতি কেজি গোলমরিচ ৮০০-১০০০টাকা পড়ে। সঠিক পরিচর্যা এবং বছরে দু‘বার পরিমাণমত সার প্রয়োগ করলে গাছে ফল বেশী ধরে। সুবিধা হচ্ছে, রোপনের পর ঐগাছ থেকে অনেক বছর ধরে সহজে ফসল সংগ্রহ করতে পারে। স্থানীয় মেম্বার আদর্শ কৃষক বাবু ধন ত গ্যা গোলমরিচ চাষের সফলতা দেখে আগামীতে তিনিও বাণিজ্যিক উপায়ে চাষাবাদ করার চিন্তা ভাবনা করছেন। গোলমরিচ চাষ খুব সহজ এবং লাভজনক জানিয়ে উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সনজিত কুমার দাশ দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, কৃষক স্বপন গোলমরিচ চাষে সফলতার মুখ দেখাই অপরাপর চাষীরাও এখন উদ্ধুদ্ধ হচ্ছে। কৃষকরা নতুন নতুন ফসলের চাষ করতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরণের কারিগরী সহযোগীতা দেওয়া হবে। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: শহিদুল ইসলাম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, বসতভিটার সবখানে সহজে গোলমরিচের চাষাবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। পুরুষ ছাড়া বাড়ীর মহিলারা পরিচর্যা করতে পারে। এতে মহিলাদের ক্ষমতায়ন হচ্ছে। আগামীতে উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও গোলমরিচ চাষ ছড়িয়ে দিতে চাই।
টেকনাফে “গোলমরিচ” চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

October 17, 2016