একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
শতাধিক বছরের পুরোনো ভবনে চলছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের(জবি) প্রশাসনিক কাজ। যেকোনো মুহূর্তে ভবনটি ধসে পড়তে পারে— এমন আতঙ্ক নিয়েই কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশেষজ্ঞরা ভবনটিতে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন। আর ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ভবনটি ভাঙতে রাজি নয় কর্তৃপক্ষ। বরং ভবনটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের আওতায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, জবির এই পুরোনো দোতলা ভবনের উপর তলায় রয়েছে উপাচার্যের কার্যালয়, উপাচার্যের অডিটোরিয়াম, ট্রেজারের কার্যালয়, তথ্য ও প্রযুক্তি শাখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভার, জনসংযোগ কর্মকর্তার অফিস ও সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়। নিচ তলায় রয়েছে অর্থ ও হিসাব দফতর, প্রক্টর দফতর ও রেজিস্ট্রার দফতর। এছাড়া রয়েছে রেজিস্ট্রার দফতরের সেকশন অফিসারের কার্যালয়।
জানা যায়, ১৯০৯ সালে ঢাকার কমিশনার স্যার রবার্ট নাথানের প্রচেষ্টায় আশি হাজার টাকার অনুদান পাওয়া অর্থে তৈরি হয় তৎকালীন জগন্নাথ কলেজের একাডেমিক ভবন। ভবনের একটি নামফলক থেকে জানা যায়, রাজা মন্থাথ ১৯১০ সালে ভবনটির শুভ সূচনা করেন। বর্তমানে ১০৬ বছরের এই পুরোনো ভবনে চলছে জবির যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম। এখানে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ভবন ধস নিয়ে সর্বদা এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেজিস্ট্রার দফতরের তৃতীয় শ্রেণির এক কর্মচারী বলেন, ‘সর্বদা ভয় কাজ করে ভবনের কখন কী হয় এই নিয়ে। কিছু করার নেই, যেহেতু চাকরি করি তাই এই ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়।’
একজন সেকশন অফিসার জানান, একটু বাতাস লাগলেই ভয় ঢুকে যায়- এই বুঝি কিছু ঘটল। আসলে আমরা চাকরি বাঁচাতে এখানে কাজ করতে বাধ্য। প্রশাসন কিছু না করলে আমরা কি করব?
জানা যায়, গত বছর নেপাল ও ভারতের বড় বড় দুটি ভূমিকম্পের পর এই ভবনের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল দেখা যায়। পরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে বিশেষজ্ঞ এনে ভবনের সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে তারা বলেন, এই ভবনের দক্ষিণাংশে বড় ধরনের ফাটল থাকায় ভবনে ভারি কোনোকিছু তোলা বা রাখা যাবে না। এছাড়া লোকজনের চলাচলও বেশি না করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জবি’র প্রধান প্রকৌশলী সুকুমার সাহা বলেন, ‘এই ভবনের ব্যাপারে আমরা বুয়েট থেকে বিশেষজ্ঞ এনে দেখিয়েছি এবং তাদের দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি।’
এ ব্যাপারে জবি রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে বসে আছি। উপায় নাই, আমাদের কোনো জায়গা নেই যেখানে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানো যায়। এছাড়া এখানে যেসব গুরুত্বপূর্ণ নথি আছে তা স্থান সংকুলানের অভাবে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করতে পারছি না। আমি আশা করি ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে আমাদের যাবতীয় নথিগুলোকে ডিজিটালাইজড করে সংরক্ষণ করতে পারব। আমরা যত দ্রুত সম্ভব এই ভবন থেকে প্রশাসনিক কাজ সরিয়ে নেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা তো জীবন হাতে নিয়ে এই ভবনে উঠি। যদি কেউ মারা যায় তবে আমিই তো আগে মারা যাব! কারণ সবার উপরে আমি থাকি।
প্রশাসনিক ভবন নির্মাণের ব্যাপারে ভবিষ্যৎ কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপাতত: কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এই ভবন আমরা ভেঙে ফেলব না। এটা আমাদের ঐতিহ্য। যা আমাদের রক্ষা করতে হবে যাতে আমরা ভবিষ্যতে এই ভবনকে ইউনেস্কো’র হেরিটেজের আওতায় নেওয়ার আবেদন করতে পারি।