ঝিনাইদহ-সড়ক বিভাগে হরিলুট চলছে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর মহাসড়ক নির্মান প্রকল্পে সরকারী অর্থ লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সরকারের বৃহৎ এই প্রকল্পে যেনতেন ভাবে কাজ করে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী, এসডি ও কয়েকজন এসও ফুলে ফেঁপে উঠেছেন।

সড়ক নির্মানে এই পুকুর চুরির কারণে ওই সড়কের আমেরচারা নামক স্থানে কয়েক কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত রাস্তাটি খানাখন্দকে রূপ নিয়েছে। সিডিউল বর্হিভুত নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে রাস্তা মেরামত করায় ৬ মাসের মধ্যে ব্যস্ততম এই সড়কের বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের এসডি নজরুল ইসলাম রাস্তা নষ্ট হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মুজিবনগর রাস্তা উন্নয়ন সরকারের একটি চলমান প্রকল্প। বরাদ্দ পেলে মেরামত করা হবে।

এদিকে একই সড়কের উত্তর নারায়ণপুর থেকে বৈডাঙ্গা মাঠ পর্যন্ত রাস্তাটি দেড় বছর ধরে খুড়ে রাখা হয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শিমুল এন্টারপ্রাইজকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও রাস্তা নির্মানের কোন উদ্যোগ নেই। রাস্তা খুড়ে রাখার কারণে প্রতিদিন চলাচলকৃত যানবাহন ঝুকির মধ্যে পড়ছে। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হয়। ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা মুজিবনগর রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ঝিনাইদহের অংশে ৪৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু নির্মান কাজ শুরু থেকেই ঘপলাবাজীর আশ্রয় নেওয়া হয়।

নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, এসডি নজরুল ইসলাম ও এসও আহসান এবং মনিরুল মাটির কাজ না করে কয়েক কোটি টাকা ভাগাভাগী করে নিয়েছেন বলে কথিত আছে। এ সব বিষয়ে সড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত দল তদন্ত করে গেলেও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সিডিউল সুত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা-মুজিবনগর রাস্তায় প্রতি কিলো রাস্তা ৩ কোটি টাকার নির্মান ব্যায় ধরা হয়েছে।

এর মধ্যে প্রতি কিলোতে বেইজ টাইপ ওয়ান নির্মান ব্যায় ধরা হয় ১ কোটি টাকা, বেইজ কোর্স ওয়ারিং র্কোস করতে প্রতি কিলোমিটারে বরাদ্দ দেড় কোটি টাকা ও প্রতি কিলোমিটারে ৫০ লাখ টাকার মাটির কাজ রয়েছে। বেস টাইপ ওয়ানে ৪ ঝুড়ি পাথর ও এক ঝুড়ি বালি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে সিডিউলে। সেখানে কাজ করা হয়েছে ঠিক উল্টো। বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত এই কাজে কতিপয় ঠিকাদার মনসম্মত কাজ করলেও বেশির ভাগ ঠিকাদার অফিসকে ম্যানেজ করে মাটির টাকা তুলে নিয়েছেন। যা এলজিইডির ল্যাব টেকনিশিয়ান দিয়ে পরীক্ষা করলে এই পুকুর চুরির ঘটনা ধরা পড়বে।

অন্যদিক রাস্তার কাজ শেষে ঠিকাদারকের বিল পরিশোধ করা হলেও রাস্তার দুই সাইড ও মাঝখানে সাদা রংয়ের ডিভাইডার দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়নি হার্ড সোল্ডারে মাটি। ফলে অল্প দিনে রাস্তার বিভিন্ন অংশে ত্রুটির সৃষ্ট হয়েছে। এলাকাবাসির ভাষ্যমতে প্রতি কিলোমিটারে ৫০ লাখ টাকার মাটি ধরা হলেও। রাস্তার সাইড প্রশস্ত করণে কোন মাটি দেওয়া হয়নি। রাস্তা তদারকি কর্মকর্তা এসও মনিরুল ইসলাম ও আহসানুল হক প্রতি কিলোতে ২০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে মাটির বিল দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

ঠিকাদারদের একটি সুত্র জানা গেছে, আনলিমিটেড ঘুষ নেওয়ার কারণে রাস্তার কাজ মানসম্মত করা সম্ভব হয়নি। তাদের ভাষ্য ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সরকারের রাস্তা উন্নয়নের টাকা ভুয়া পাইলিং, রং, রাস্তার পাশ পরিস্কার, মালামাল সপ্লাই, বালি, ইট ও মাটির কাজ দেখিয়ে হরিলুট করা হয়েছে। এছাড়া এক লাখ, পঞ্চাশ হাজার ও ২৫ হাজারের (বিলো) নিচে প্রায় দুই’শ ভুয়া কোটেশন দেখিয়ে সরকারের রক্ষনাবেক্ষন খাতের কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম (বর্তমান কুষ্টিয়ায়), এসডি নজরুল ইসলাম, এসও আহসান ও মনিরুল সরকারী এই অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ঠিকাদারদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এদিকে হরিণাকুন্ডুর আমতলা কন্যাদহ সড়কে কার্পেটিংয়ে কম থিকনেস দিয়ে দুই কোটির বেশি টাকা লোপাট করা হয়েছে। এসডি নজরুল ইসলাম এই দুর্নীতির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের বিদায়ী নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, মাটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। রাস্তার কাজ এখনো চলমান। তাই টাকা তছরুপের বিষয়টি ঠিক নয়। তিনি ভুয়া কোটেশন ও বিল ভাউচারে সড়কের টাকা হরিলুটের বিষয়টি এড়িয়ে যান। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এসডি নজরুল ইসলাম বলেন, মুজিবনগর সড়টির নির্মান কাজ এখনো শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়দ শেষ হয়েছে। নতুন করে বরাদ্দ পেলে নষ্ট হওয়া রাস্তা মেরামত করা হবে।

তিনি কোটেশন বানিজ্য ও মাটির কাজের টাকা লোপাটের কথা কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে এসও আহসানুল ও এসও মনিরুল ইসলামের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলে তরা ফোন রিসিভ করেন নি। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের নবাগত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সেলিম আজাদ খানের বক্তব্য জানতে তার ০১৭৩০৭৮২৭৭০ নাম্বারের মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনিও ফোন ধরেন নি।