অর্থনীতি ডেস্ক:
আগামী বছরের জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করতে চায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ইতোমধ্যে এটি বাস্তবায়নে ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে ভ্যাটদাতাদের ভ্যাট অফিস বা কর্মকর্তাদের কাছে যেতে হবে না। ঘরে বসেই বা বিদেশে অবস্থানকালেও ভ্যাট পরিশোধ করা যাবে।
জানা গেছে, ভ্যাটদাতা ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের অজানা আশঙ্কা রয়েছে। এটি দূর করতেও উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। ইতোমধ্যে রাজধানীসহ বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা করা হবে। এ ছাড়া আয়কর মেলায় করদাতাদের ব্যাপক সাড়া মিলেছে। আয়কর মেলার আদলে ভ্যাট মেলা করার পরিকল্পনা নিয়েছে এনবিআর।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আগামী জানুয়ারি মাসে ভ্যাট মেলা করা হবে। এতে সব ধরনের সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হবে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেসব বিষয় আশঙ্কা বা হয়রানির মনে হবে, তা স্পষ্ট করা হবে মেলায়।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সঙ্গে দফায়-দফায় বৈঠক হয়েছে। ব্যবসায়ীরাও ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। এ ছাড়া এনবিআরের একজন সদস্যকে (শুল্ক ও নীতি) প্রধান করে ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে। ব্যবসায়ীদের সমস্যাগুলো দেখছে। শিগগির অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।
এনবিআর সূত্র জানায়, দেশের বৃহত্তর স্বার্থ এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা সংস্কারের মাধ্যমে ভ্যাট ব্যবস্থার পদ্ধতি সহজিকরণ করা হয়েছে। বিষয়গুলো জনগণকে অবহিত করা হবে।
এ ছাড়া ব্যবসায়ী, স্টেকহোল্ডার, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে ভ্যাট এডুকেশন ফোরাম গঠন করা হয়েছে। সম্প্রতি রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, টাঙ্গাইল এবং সিলেট কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট উদ্বোধন করা হয়েছে। শিগগির সব কমিশনারেটে এ ফোরাম গঠন করা হবে। জানা গেছে, নির্ধারিত সময়েই ভ্যাট আইন কার্যকর হবে এবং পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, ভ্যাট আইন নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়নে তাগাদা রয়েছে আইএমএফের। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘ভ্যাট অনলাইন প্রজেক্ট’ বাস্তবায়নাধীন। এনবিআর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই ভ্যাট পরিশোধ করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে ভ্যাট রিটার্নও দাখিল করা যাবে।
এনবিআরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সহজ উপায় ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে ভ্যাট পরিশোধ নিশ্চিত হবে। এতে করে দুর্নীতি কমবে, বাড়বে রাজস্ব আহরণ।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন আছে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮ লাখ ৪০ হাজার। এর মধ্যে মাত্র ৫০ হাজার নিয়মিত ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে। আলোচ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছোট-মাঝারি-বড় সব ব্যবসায়ীকে বাধ্যতামূলক ভ্যাটের হিসাব দিতে হবে। এর ফলে ভ্যাট প্রদানের েেত্র ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করছে এনবিআর।
এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে ভ্যাট আইনটি কার্যকর রয়েছে ১৯৯১ সাল থেকে। তখন থেকেই যতগুলো ডেভেলপমেন্ট হয়েছে তার সংযোজন নতুন আইন। নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হলে ভ্যাট কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতা কমবে। ঘরে বসেই ভ্যাট প্রদান ও রিটার্ন দাখিল করা যাবে। আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ফিজিক্যাল নয়, ডিজিটাল সেবা দেওয়ার। এতে দুর্নীতি ও হয়রানি উভয়ই কমবে।
ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক ও এনবিআর সদস্য রেজাউল করিম বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হবে। এ জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। তিনটি মডিউলে কাজ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম মডিউলে রেজিস্ট্রেশনের প্রস্তুতি সম্পন্ন। দ্বিতীয় মডিউলে রিটার্ন দাখিলের বিষয়ে আগামী মার্চের মধ্যে গো-লাইভে যাওয়া যাবে। আর শেষ পর্যায়ে আপিল ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।