চোখের জলে মাকে বিদায়: কক্সবাজার সৈকতে মিলনমেলা

মাহাবুবুর রহমান: ৪ দিনের হৃদয় মাতানো দূর্গোৎসব শেষে আবেগ-উচ্ছ্বাস আর চোখের জলে মা দূর্গাদেবীর প্রতিমা বিসর্জন দিয়েছে ভক্তরা। শেষবারের মতো’ তেল-সিঁদুর পরিয়ে, সাগর জলে প্রতিমা ভাসিয়ে মাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানালো কক্সবাজারের সনাতন ধর্মালম্বীরা। সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, বিজয়া দশমীতে মর্ত্য ছেড়ে পুনরায় কৈলাসে গেলেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। আর এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো বাঙালি হিন্দুদের সবচে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসবের।
বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই শুর হয় দেবীকে বিদায়ের আয়োজন। জেলার বিভিন্নস্থান থেকে আসতে শুরু করে প্রতিমাবাহী ট্রাকের বর্ণিল শোভাযাত্রা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে এই শোভাযাত্রা শেষ হয়। এরপর শুর হয় বিসর্জনের পালা। এর আগে সকালে বিজয়া দশমীর অঞ্জলি প্রদানের মাধ্যমে এ বছরের মত শেষ হয় দেবীর আরাধনা। বিহিত পূজা শেষ করে দেওয়া হয় দর্পণ বিসর্জন। মণ্ডপে মণ্ডপে রঙের খেলায় চলে শেষ মুহূর্তের উদযাপন। বিসর্জনের ‘ক্ষণে’ প্রতিবারের মতো এবারো কক্সবাজার সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নামে। ঢাক, ঢোল, কাসর ঘণ্টাসহ নানা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ‘জয়, দুর্গা মায়ের জয়’ ধ্বনি তুলে একের পর এক প্রতিমা ভাসানো হয় সাগরে।
প্রতিমা বিসর্জন দিতে আসা মুনমুন চৌধুরী জানান ” চার দিন ধরে মায়ের পূজা করেছেন। আজ মাকে বিদায় জানাতে এসেছেন
শহরের বিডিআর ক্যাম্প থেকে প্রতিমা নিরঞ্জনে এসেছিলেন অপু দত্ত। তিনি বলেন, “পাড়ার বন্ধুরা মিলে পূজার আয়োজন করি প্রতিবছর। এবার বিদায়ের পালা। সবাই মিলে মাকে বিদায় দিলাম।”
কক্সবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রনজিৎ দাশ জানান সৈকতে বিসর্জন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।
কক্সবাজার ট্যুরিষ্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী জানান সৈকতে প্রায় শতাধিক পুলিশ, অর্ধশতাধিক র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেছে। এছাড়া ৩ টি ওয়াচ টাওয়ার, একটি কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে বিসর্জন অনুষ্ঠান মনিটরিং করা হয়।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান মন্ডপ থেকে সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা আনা পর্যন্ত প্রতিমাবাহী গাড়িতে পুলিশ ছিল। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ৪ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেছেন। এদিকে মা দূর্গাকে বিসর্জনের আগে সৈকতের জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মে এক সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
বিসর্জন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেণ সিকদার বলেন সৈকতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার প্রত্যয় আবারও বাস্তাবায়িত হলো। এতে সব ধর্মে মানুষের উপস্থিতিত তাই জানান দেয়। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে সব ধর্মের মানুষের উপস্থিতিতে সম্প্রীতির এক সেতুবন্ধন বিশ্ববাসী দেখলো। আর এ বন্ধনে সবাই এক সুরে থাকার প্রত্যয় অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা করেছেন।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন, সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি, কউক চেয়ারম্যান কর্ণেল ফোরকান আহমদ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসাইন, কক্সবাজার জেলা পরিষদের প্রশাসক মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, পৌরসভার চেয়াম্যান মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাসহ, হিন্দু ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রণজিত দাশের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বাবুল শর্মার পরিচালনায় এই অনুষ্ঠান শেষে বিকাল ৫ টায় সাগরে দুর্গা বিসর্জন দেওয়া হয়।