একাত্তরলাইভডেস্ক: চীনের ১৫টি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের ১৯টি চুক্তি সই হয়েছে।রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলের বলরুমে শুক্রবার বিকেলে বাংলাদেশ-চায়না বিজনেস ফোরামের যৌথ বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েত উল্লাহ আল মামুনের উপস্থিতিতে এসব চুক্তি সই হয়।ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) যৌথভাবে এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে চীনের ১২০ কোম্পানির ১০০ নেতৃস্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে বাংলাদেশ-চীনের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে মতবিনিময় করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, সিরামিক, লেদার খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনার বিষয়টি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা।এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। চীনের প্রতিনিধি দলের এই সফর সেই সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিবে। যদিও আমাদের মধ্যে ১৯টি চুক্তি সই হয়েছে। তারপরও আশা করছি, পরবর্তীতে এ সংখ্যা বেড়ে ৫০টির মতো হতে পারে। চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে নিশ্চই লাভবান হবেন। আমরা আশাবাদী, যদি উভয়দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৫০টি চুক্তি সই হয় তাহলে তার পরিমাণ কয়েক বিলিয়ন ডলার দাঁড়াবে। এ ছাড়া, সরকারি উদ্যোগে তো আলাদা চুক্তি হচ্ছেই।তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মিয়ানমার (বিসিআইএম) ও সিল্ক রুটের আওতায় চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের এ সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন ও দরিদ্র বিমোচনে ঢাকা-বেইজিংয়ের মধ্যকার এ বাণিজ্য চুক্তিগুলো বিশাল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমার বিশ্বাস, চীনের ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের উত্তম স্থান হিসেবে বাংলাদেশকেই বেছে নেবেন।বৈঠকে চায়না কাউন্সিল ফর দ্য প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডের (সিসিপিআইটির) ভাইস চেয়ারম্যান চেন ঝো বলেন, টেক্সটাইল, অটোমোবাইল, যন্ত্রাংশ, জাহাজ নির্মাণ, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।তিনি আরো বলেন, অবকাঠামোগত উন্নয়নে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশে বিনিয়োগ ব্যাংকের মধ্যেই রয়েছে। আমরা আস্থা নিয়ে এ দেশের বিনিয়োগ পার্কে বিনিয়োগ করবো। আমাদেরই এই প্রতিনিধি দলে অনেক উদ্যোক্তা রয়েছেন। যারা এ দেশে বিনিয়োগ করতে চান। চামড়া, অবকাঠামো, তৈরি পোশাক, ওষুধ, অটোমোবাইলসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের কথা চিন্তা করছি আমরা। চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য চীনে রপ্তানি করে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য দূর করা সম্ভব।তিনি বলেন, বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা করতে চাই। আমাদের দেশের প্রযুক্তি ও দক্ষতা বাংলাদেশের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। এফবিসিসিআই ও সিসিপিআইটি এর মাধ্যমে নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছে। যাতে উভয়দেশের ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাবে। এ দেশে বিনিয়োগ ও ব্যবসার ভালো পরিবেশ রয়েছে।এফবিসিসিআইয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ১ হাজার ৪৫ কোটি ৩৯ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি মাত্র ৮০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। চীন থেকে আমদানি হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। তাই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে ঢাকা ও বেইজিং।দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ এখন চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশ এখন চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ১ হাজার কোটি ডলার (১০ বিলিয়ন) ছাড়িয়ে গেছে।বৈঠকে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আবদুল মোকতাদির, অ্যাপিলিয়ন গ্রুপের রেজাউল কবির, চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের প্রেসিডেন্ট ওয়াং জু শেং, টিবিয়ান ইলেকট্রিক অপারেটর কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ঝাওয়াংশি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের শেষ পর্যায়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের এতে যোগ দেন।
চীনের ১৫ কোম্পানির সঙ্গে ১৩.৬ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি
October 14, 2016