চিকিৎসকদের দলাদলি আর সার্টিফিকেট বানিজ্যর কারণে ভেঙ্গে পরেছে হাসপাতালের পাঁচ লক্ষাধিক জনগনের স্বাস্থ্য সেবা

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতাঃ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা ৫০শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসক সংকট, চিকিৎসকদের দলাদলি আর সার্টিফিকেট বানিজ্যর কারণে ভেঙ্গে পরেছে পাঁচ লক্ষাধিক জনগনের স্বাস্থ্য সেবা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক সংকটের কারণে তিন লাখেরও বেশী জনসংখ্যা অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া উপজেলা ও পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলার পশ্চিমাংশ, উজিরপুরের উপজেলার উত্তরাংশ ও কোটালীপাড়া উপজেলার পূর্বাংশের অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক জনগন চিকিৎসা সেবা থেকে বি ত হচ্ছে। এলাকার জন সাধারনের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা এলাকায় ৩১শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৪ সালে ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৫০ শয্যার হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। উপজেলার ৫০ শয্যার এ হাসপাতালের আওতায় ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র (সাব সেন্টার)সহ চিকিৎসকদের ২৪টি পদ রয়েছে। এসকল পদের মধ্যে ১৩ জন চিকিৎসকের পদ দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত শূণ্য রয়েছে।
২০১১ সালে ইমারজেন্সী মেডিকেল অফিসার হিসেবে ডা. আবু বক্কর সিদ্দিক ও ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে জুনিয়ার কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডা. সোমা হালদার যোগদান করে এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। তাদের বাসার ঠিকানায় একাধিকবার কর্মস্থলে আসার জন্য পত্র দেয়া হলেও ওই পত্র বাসার কেউ গ্রহণ করেনি বলে জানান ইউএইচএএফপিও ডা. মো. আলতাফ হোসেন। একাধিক সূত্র মতে, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল আর দলাদলির কারনেও কাংখিত স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। একজন চিকিৎসকের অধীনে ইমারজেন্সিতে ভর্তিকৃত রোগী হাসপাতালের বেডে পরে থাকলেও অন্য চিকিৎসক ওই রোগীকে দেখেন না। তাদের দ্বন্দ আর কোন্দলের কারণে চিকিৎসাযোগ্য রোগীদেরও উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি না করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেলে রেফার্ট করে আসছেন চিকিৎসকেরা। ফলে অসহায় ও দরিদ্র রোগিদের অর্থ সংকটে পড়তে হয় মহা বিপদে। এছাড়াও রয়েছে অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট বানিজ্যর অভিযোগ। থানা সূত্রে জানা গেছে, অনেকেই মারামারির ঘটনায় গুরুতর জখমের চিহ্ন না থাকলেও তাৎক্ষনিক রোগী নিয়ে থানায় মামলা করতে এলে পুলিশের পক্ষ থেকে প্রথমে তাকে চিকিৎসা নিতে পরমর্শ প্রদান করলে ওই রোগীরা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে পরবর্তিতে ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬ এর মত গুরুতর জখমী ধারার সার্টিফিকেট নিয়ে থানায় বা আদালতে মামলা করছেন। পক্ষান্তরে চিকিৎসকদের চাহিদানুযায়ি অর্থ না দিলে গুরুতর জখমী রোগীদেরও “নরমাল” সার্টিফিকেটে বানিজ্য চলে আসছে হাসপাতালে দীর্ঘ দিন যাবত। ফলে এলাকায় মিথ্যা মামলার সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। থানায় মোট মামলার প্রায় অর্ধেক সার্টিফিকেটের কারণে মামলা নিতে হয় পুলিশের। হাসপাতালে ডাক্তারদের শূণ্য পদের মধ্যে রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন), জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চক্ষু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ইএনটি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (কার্ডিওলজি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (আর্থপেডিক্স), জুনিয়র কনসালটেন্ট (পেডিয়েট্রিক;শিশু), জুনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম/যৌণ)। ডাক্তার সংকটের কারনে হাসপাতালে আসা রোগীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বি ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ইউএইচএএফপিও ডা. মো. আলতাফ হোসেন চিকিৎসক শুণ্যতা আর সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। চিকিৎসকদের মধ্যে কোন দলাদলি নেই জানিয়ে সার্টিফিকেট বানিজ্যর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।