চট্টগ্রামে দাপট দেখাল ব্যাটসম্যানরাও

একাত্তরলাইভডেস্ক: ১৯৮৭ সালে ফয়সালাবাদ টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ৩ স্পিনার ইংল্যান্ডের দশ উইকেট তুলে নিয়েছিল। ২৯ বছর পর সেই স্মৃতি ফিরে এল চট্টগ্রামে।ফয়সলাবাদের মত চট্টগ্রামেও বাংলাদেশের ৩ স্পিনার গুড়িয়ে দিয়েছে ইংল্যান্ডকে। সেবার ইংল্যান্ড করেছিল ২৯২ রান। এবার করল মাত্র ১ রান বেশি। পাকিস্তানের ওই দলে ছিল ২ পেসার। এবার বাংলাদেশ দলেও খেলল ২ পেসার। দুই ইনিংসে পেসাররা যেন শুধুই দর্শক! ৭ উইকেটে ২৫৮ রান নিয়ে শুক্রবার দ্বিতীয় দিন শুরু করা ইংল্যান্ড শেষ ৩ উইকেট হারায় মাত্র ৫০ মিনিটে। ৩৬ রানে দিন শুরু করা ক্রিস ওকস তাইজুলের করা দিনের প্রথম বলে নিজের উইকেট হারান। ক্যাচ দেন শর্ট লেগে। আগের দিন ৫ উইকেট পাওয়া তরুণ তুর্কী মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে আসেন। দ্বিতীয় বলেই আদিল রশীদের এলবিডাব্লিউর আবেদন। আম্পায়ার ক্রিস গ্র্যাফেনি আঙুল তুলে দিয়েছিলেন কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান রশীদ।এরপর অবশ্য বেশিক্ষণ টিকে থাকেননি রশীদ। মিরাজের পরিবর্তে উইকেট তুলে নেন তাইজুল। রশীদ কভারে সাব্বির রহমানের দূর্দান্ত ক্যাচে শিকার হন।শুরুর পর ইংল্যান্ড দলের লেজটাও গুড়িয়ে দেন মিরাজ। মিরাজের অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল এগিয়ে খেলতে গিয়ে উইকেটের পিছনে ক্যাচ দেন ব্রড। আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় মুশফিক রিভিউয়ের সাহায্য নেন। তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য চাওয়ায় বাঁচতে পারেননি ব্রড।সেই সঙ্গে মিরাজ ষষ্ঠ উইকেটের স্বাদ নেন। ৮০ রানে ৬ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে মিরাজই বাংলাদেশের সেরা অভিষিক্ত বোলার। ২৯৩ রানে অলআউট ইংল্যান্ড, যা বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের সর্বনিম্ন। এর আগে ২৯৫ রান করেছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৫ উইকেটে ২২১। সফরকারীদের থেকে ৭২ রানে পিছিয়ে টিম বাংলাদেশ।জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৯ রানে ২ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের স্পিনাররা যেভাবে টার্ন পাচ্ছিল ইংলিশ স্পিনাররাও সেভাবেই টার্ন পাচ্ছিল। টার্নের পাশাপাশি বাড়তি বাউন্সও পাচ্ছিল ইংলিশদের স্পিনাররা। বাউন্সের সুবিধা কাজে লাগিয়ে ইমরুল কায়েস ও মুমিনুল হককে সাজঘরে ফেরত পাঠান মঈন আলী। ইমরুল সরাসরি বোল্ড ও মুমিনুল দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে শুরুতেই দলকে বিপদে ঠেলে দেন।তৃতীয় উইকেটে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ৯০ রানের জুটি গড়েন তামিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।ঘরের মাঠে তামিম জ্বলে উঠেন প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। নজরকাড়া শট খেলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৯তম ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি। পাশাপাশি বাংলাদেশের মাটিতে সাকিবের পর ২ হাজার রানের মাইলফলকও স্পর্শ করেন। তামিম হাফসেঞ্চুরি তুলে নিলেও মাহমুদউল্লাহ ৩৮ রানের পর ইনিংস বড় করতে পারেননি। লেগ স্পিনার আদীল রশিদের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে রুটের হাতে ক্যাচ দেন মাহমুদউল্লাহ। ৬৬ বলে ৩ চারে ইনিংসটি সাজান মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়ের পর চতুর্থ উইকেটে ৪৪ রান যোগ করেন তামিম-মুশফিক। দেশসেরা ওপেনার তামিম স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন আরেকটি সেঞ্চুরির। হাফসেঞ্চুরির পরও সেভাবে ব্যাটিং করছিলেন। কিন্তু ১১ বছর পর ইংল্যান্ড দলে ফেরা গ্যারেথ ব্যাটি তামিমকে তিন অঙ্কের কাছাকাছি যেতে দেননি। ৭৮ রানে তামিম ব্যাটির কুইকারে বেয়ারস্টোর হাতে ক্যাচ দিয়ে ২২ গজের ক্রিজ ছাড়েন।তামিমের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা সাকিবকে নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে শেষটা দারুণ করতে পারতেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। কিন্তু দিনের খেলা শেষ হওয়ার মাত্র ১৫ বল আগে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন টেস্ট অধিনায়ক। বেন স্টোকসের আউটসুইংয়ে বধ মুশফিক। ১৬তম হাফসেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া হয়নি মাত্র ২ রানের জন্য।নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা শফিউলকে নিয়ে বাকিটা সময় সাকিব কাটিয়ে দেন। ৬০ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩১ রানে অপরাজিত আছেন সাকিব। ৯ বল খেলে শেষ বিকেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি শফিউল। পড়ন্ত বিকেলে উইকেট না হারালে নিশ্চিতভাবেই চট্টগ্রামের দ্বিতীয় দিনটি হত শুধুই বাংলাদেশের। প্রথম দুই দিন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ভালোই দাপট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানরা তৃতীয় দিন শুরুটা ভালো করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই লিড নিতে পারতো টাইগাররা। সাকিবের পর স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে আছেন দুই অভিষিক্ত সাব্বির রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রাম টেস্ট যে দ্রুতই শেষ হচ্ছে না তা বলাই যায়!