গাজীপুরের আওয়ামী রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া

একাত্তরলাইভডেস্ক: ঘোষণা হয়েছে গাজীপুর জেলা ও মহানগর কমিটি। কমিটি দুইটিতেই প্রবীণ নেতাদের পাশাপাশি স্থান পেয়েছেন নবীনরা।গাজীপুরের আওয়ামী রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া লেগেছে। চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন নেতা-কর্মীরা। কমিটি নিয়ে দলের সব শ্রেণির নেতা-কর্মীরাই খুশি। সব মিলিয়ে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে জেলার আওয়ামী রাজনীতি।গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে জাতীয় কিংবা স্থানীয় প্রায় সব নির্বাচনে এখানে থাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের জয়-জয়াকার। কিন্ত গত ২০১৩ সালে নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর কাছে বিশাল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী পরাজিত হলে স্থানীয় আওয়ামী নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা।এবারের সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে পরিবর্তন আনা হয়নি। ওই পদে আ ক ম মোজাম্মেল হকই বহাল রয়েছেন। তিনি গাজীপুরের আওয়ামী রাজনীতির সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ। প্রায় দুই যুগ গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।বর্ষীয়ান এ নেতা বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে স্থান পেয়েছেন তরুণ রাজনীতিক মো. ইকবাল হোসেন সবুজ।সবুজ একসময় জেলার জনপ্রিয় ছাত্রনেতা ছিলেন। বিপুল ভোটের ব্যবধানে তিনি ছাত্রলীগ থেকে জেলার ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাজনীতিতে এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।২০০৯ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হন শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্যবিলুপ্ত কমিটির তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ইকবাল হোসেন সবুজ তরুণ সমাজের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তেমনি জনপ্রিয় তৃণমূল আওয়ামী লীগেও।প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা গত ১০ অক্টোবর ৭১ সদস্যের মহানগর কমিটির অনুমোদন দেন। এই কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে জেলার আরেক প্রবীণ রাজনীতিক অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা  খানকে। তিনি বিলুপ্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং টঙ্গী পৌরসভার মেয়র ছিলেন।সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে তরুণ রাজনীতিক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে। তরুণ এ নেতা গাজীপুর সদর উপজেলার প্রাক্তন ভাইস চেয়ারম্যান এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে (২০১৩ সালে) মেয়র প্রার্থী হয়ে তিনি জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন।পাশাপাশি গাজীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও গাজীপুর বারের তিনবারের সভাপতি অ্যাডভোকেট ওয়াজউদ্দিন মিয়াকে, জেলা কমিটির প্রাক্তন সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলীম উদ্দিন বুদ্দিন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রাক্তন কমান্ডার আবদুর রউফ নয়ন ও গাজীপুর আদালতের জিপি অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বাবুলকে সহসভাপতি করা হয়েছে।রাখা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কাজী ইলিয়াস, প্রাক্তন যুবলীগের নেতা মুজিবুর রহমানকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামানকে যুব ও ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্বে। নবীন-প্রবীণের সংমিশ্রণে সৎ ও ত্যাগী নেতাদের সমন্বয়ে ৭১ সদস্যের নতুন কমিটি পেয়ে উজ্জীবিত গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ।ইকবাল হোসেন সবুজ এবং মো. জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর আওয়ামী লীগের পৃথক দুটি কমিটি সাধারণ সম্পাদক। এই দুই নেতার মধ্যে রয়েছে অভিন্ন কিছু মিল। দুজনই সৎ ও ভদ্র। দলের কর্মীদের কাছে বিশেষ করে, তরুণ সমাজের কাছে তারা ব্যাপক জনপ্রিয়। শুধু দলে নয়, দলের বাইরেও সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে তাদের রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। যে কোনো নির্বাচনে বিরোধী শিবিরের ভোট ব্যাংক থেকে ভোট টানার সক্ষমতা তাদের দুজনেই রয়েছে বলে অন্য দলের নেতা-কর্মীরাও মনে করেন।এদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন হওয়ায় পর আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনগুলো পাচ্ছে নতুন একটি করে ‘মহানগর’ ও ‘ওয়ার্ড’ কমিটি। কমিটি সংখ্যা বাড়ার ফলে বিভিন্ন সময়ের বঞ্চিত নেতারাও এ সব কমিটিতে স্থান পাচ্ছেন। এতে অনেকাংশে নেতাদের মধ্যে বিভেদও কমে আসছে।