অনলাইন ডেস্ক: দুপুর সোয়া ১২টা। ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রেন আসছে। ঠিক এ সময় এক নারী তার কোলের শিশুটিকে রেললাইনে শুইয়ে দিয়ে নিজে ঝাঁপ দিলেন ট্রেনের নিচে। ট্রেন ওপর দিয়ে চলে গেল। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল মা-মেয়ে। একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এই মা। শনিবার পঞ্চগড় সদর উপজেলার বকুলতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী রশিদুল ইসলাম এভাবেই এ ঘটনার বর্ণনা করেছেন। উত্তরা নামের এই লোকাল ট্রেনটি পার্বতীপুর থেকে পঞ্চগড়ে আসছিল।
নিহত মা-মেয়ে আটোয়ারী উপজেলার বারো আউলিয়া গ্রামের শ্যামলী বসাক (২২) ও তার দুই বছরের শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু পবিত্রা সেন মায়া। নিহত শ্যামলী বসাকের বাবা অরুণ বসাকের ভাষ্য, তিন বছর আগে ঠাকুরগাঁওয়ের রাজাগাঁও ইউনিয়নের রুহিয়া আসানপুর এলাকার প্রদীপ সেনের সঙ্গে শ্যামলীর বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতে নির্যাতনের শিকার হয়ে গর্ভাবস্থায় বাপের বাড়িতে ফিরে আসেন শ্যামলী। এরপর সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু শিশুটি প্রতিবন্ধী হওয়ায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এ নিয়ে পঞ্চগড় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা বিচারাধীন। সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রতি সপ্তাহে শ্যামলী জেলা শহরের প্রতিবন্ধী হাসপাতালে যান। গতকালও চিকিৎসার কথা বলেই বের হন। ট্রেনলাইনের পাশে পড়ে থাকা শ্যামলী বসাকের ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া যায়। ব্যাগের ভেতর রাখা পরিচয়পত্র ও সন্তানের টিকা কার্ড, মোবাইল ফোন সেট পাওয়া গেছে। গত দুই বছর থেকে তিনি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পরিচালিত স্কুলে শিক্ষকতা করছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রশিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কয়েকজন রেললাইনের ধারে বাঁশবাগানের ভেতর তাস খেলছিলাম। দুপুর সোয়া ১২টায় ঠাকুরগাঁও থেকে ট্রেন আসছে। এমন সময় এক নারী কোলের এক শিশুকে রেললাইনের ওপর শুইয়ে দিয়ে নিজেও ঝাঁপ দেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের ওপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়। আমাদের করার কিছুই ছিল না।’
অরুণ বসাক জানান, পারিবারিক কলহের কারণেই তার মেয়ে নাতনিকে নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পঞ্চগড় সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল হাসান সরকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, স্বামীর ওপর রাগ করেই বাচ্চাসহ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন শ্যামলী বসাক। বিষয়টি জিআরপি পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।