শাহাদাত আলম অন্তর ,কুমিল্লা প্রতিনিধি,
কুমিল্লায় বানিজ্যিক,আবাসিক দু’খাতেই অবৈধ গ্যাসের রমরমা বানিজ্যে। এতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি গচ্ছা গেলেও প্রতিষ্ঠানটির সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে কার্যকর কোন ভূমিকা নেই। ফলে সাধারণ মানুষ অর্থের বিনিময়ে নেয়া অবৈধ সংযোগ বৈধ করতে না পারায় একদিকে যেমন বিল পরিশোধ করতে পারছেনা,তেমনি কোন গ্যাস সংযোগ কেটে দেয় এই অজানা আশঙ্কায় রয়েছে। এদিকে অবৈধ সংযোগকারীরা প্রতিনিয়ত এসকল গ্রাহকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে সময় ক্ষেপন করছেদিনের পর দিন। ফলে ৩/৪ বছর ধরে বিল ছাড়াই হাজার হাজার গ্রাহক গ্যাস ব্যবহার করছে। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব আদায় থেকে।
সরেজমিন ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, জেলার বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে বিগত ৩/৪ বছর ধরে একটি সিন্ডিকেট বেপরোয়াভাবে প্রশাসনকে তোয়াক্কা না করে দিনে-রাতে সমানে আবাসিকখাতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়েছে। স্থানীয় একাধিক অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া গ্রাহক জানান, প্রায় ৪ বছর হলো আমরা কেউ ৫০ কেউবা ৬০হাজার টাকায় সংযোগ নিয়েছি। মাসের পর মাস রান্নার কাজে গ্যাস ব্যাবহার করলেও আমরা কোন মাসিক বিল প্রদান করিনা। সরেজমিন ঘুরে পূর্বহুরা গ্রামে কথা হয় তানভির নামের এক যুবকের সাথে। তিনি বলেন , ১৫ মাস পূর্বে আমরা গ্যাস সংযোগ নেই। এজন্য ৩০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে গ্যাস সংযোগকারীদের। তবে আমাদের কোন বিল বই না থাকায় মাসে মাসে বিল পরিশোধ করতে পারছিনা। টাকা দিয়েও দীর্ঘদিনে গ্যাস সংযোগ না পেয়ে ক্ষোভের কথা জানান ওই একই গ্রামের সিদ্দিক নামের অন্য একজন। তার বক্তব্য আমি, ষোলনল ইউনিয়নের বর্তমান সদস্য জামাল মেম্বারকে প্রায় ৪ মাস হলো টাকা দিয়েছি। এখনো সংযোগ পাচ্ছিনা। এঅবস্থায় রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হাতছাড়া হচ্ছে মাসের পর মাস। অভিযোগ রয়েছে ষোলনল ইউনিয়নের কামারখাড়া, বালিখাড়া, কাইতরা, ভাংতি, শিমুলখাড়া, খাড়াতাইয়া, ইন্দ্রাবতী, শিকারপুর, রামনগর, বাজাইয়ারচর গ্রামের অসংখ্য মানুষ অবৈধ সংযোগ ব্যবহার করছে এছাড়াও তারা প্রতিমাসে বিল দিচ্ছেনা । তাদের কেউ কেউ ৩০ থেকে ৬০/৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে পূর্বহুরা গ্রামের ইউপি সদস্য জামাল মেম্বার ,খাড়াতাইয়ার কামাল, একই ইউনিয়নের ভরাসার গ্রামের রোকন ও সাব্বির নামের ৪’ব্যক্তিকে সংযোগের জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন। এসময় অবৈধ সংযোগ প্রদানকারীরা আবাসিক গ্রাহকদের স্বল্পসময়ের মধ্যে গ্যাস বিল বই এনে দেওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিল। কিন্তু এখন বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে তবুও গ্যাস সংযোগ বৈধতা দিতে পারেনি। ফলে আবাসিক গ্রাহকরা প্রতি মাসে বিল ছাড়াই জ্বালানী হিসেবে গ্যাস ব্যবহার করে আসছে। কামারখাড়া গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক গৃহবধূ জানান, আমরা টাকা দিয়ে সংযোগ এনেছি। আমাদেরকে বলেছিল এটার বৈধতা দিয়ে বিল বই এনে দিবে। কিন্তু ৩/৪ বছর হয়ে গেছে আমরা গ্যাস ব্যবহার করছি কিন্তু বিল দিতে পারছিনা। এঅবস্থায় অবৈধ সংযোগ নেওয়া গ্রাহকরা আতঙ্কে পার করছে প্রতিটি দিন,কখন আসবে বাখরাবাদ গ্যাস সিষ্টেমস্ কোম্পানীর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী ভিজিলেন্স টিম। এসকল গ্রাহকরা প্রতিনিয়তই অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া সিন্ডিকেট সদস্য জামাল,কামালকে গ্যাস সংযোগের বিষয়টি বৈধ করতে অনুনয় বিনয় করলেও তারাও শুধু আশ্বাসে পার করছে । তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে,জামাল মেম্বার অস্বীকার করে বলেন,আমি কোন অবৈধ সংযোগ বানিজ্যে জড়িত না। ষোলনল ইউপি বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি শুনেছি এই ইউনিয়নের যত্রতত্র অবৈধভাবে নিমানের মালামাল ব্যবহার করে গ্যাস সংযোগের মাধ্যমে একটি চক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এতে যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। তিনি দ্রুত অবৈধ সংযোগকারীদের বিচার দাবী ,পাশাপাশি সংযোগ গ্রহণকারীদের সংযোগ বৈধতা দিতে বাখরাবাদ কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। এদিকে সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের পশ্চিম মাঝিগাছা কাজিবাড়ি সহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবহার করে আসছে।এব্যাপারে বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী লিমিটেড’র জেনারেল ম্যানেজার নিজাম শরিফুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি আপনার মাধ্যমে অবহিত হয়েছি। এখন বাখরাবাদ গ্যাস ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানীর মার্কেটিং অফিসারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলবো।