শাহআলম শফি,কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ
কখনো ডিআইজি, কখনো ওসি কিংবা ডিবি কর্মকর্তা পরিচয়ে দীর্ঘ দিন ধরে প্রতারণা করে লোকজনের নিকট থেকে অর্থ লোপাট করে আসা এক প্রতারক চক্রকে অবশেষে গ্রেফতার করেছে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের ডিআইজি পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তার স্বামীর নিকট থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছিল এই চক্রটি। এ ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়েরের পর আটক প্রতারককে সোমবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এদের মধ্যে ভুয়া ডিআইজি মাহবুব (প্রকৃত নাম জাকির হোসেন) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়ে প্রতারণার কাহিনী বর্ননা করেছে।
জানা যায়, গত ৮ মে পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের ডিআইজি মাহবুব পরিচয় দিয়ে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগমের সাথে মোবাইলে প্রতারণার মাধ্যমে তার স্বামীর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে এবং জেলসুপারের ব্যবহৃত নাম্বারটি প্রতারকদের মোবাইলে ডাইভার্ট করে। পরে জেল সুপারের স্বামীকে ফোন করে জানায় তার স্ত্রী জাহানারা বেগম সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছে এবং তার অর্ডারলি মারা গিয়েছে। তাকে বাঁচাতে হলে নগদ ১ লাখ টাকা প্রয়োজন। ৩ মিনিটের মধ্যে এই টাকা পাঠাতে হবে, নতুবা তাকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তার স্বামী প্রথমে প্রতারকদের দেয়া বিকাশ নাম্বারে ১৫ হাজার টাকা পাঠায়। পরবর্তীতে আরও ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্য ফোন করলে বিষয়টি তার সন্দেহ হয়। এসময় তার স্ত্রীর ব্যবহৃত অপর একটি নাম্বারে কল দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হন। এ ঘটনায় প্রতারক চক্রের অজ্ঞাতনামা সদস্যদের বিরুদ্ধে সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগম বাদী হয়ে কুমিল্লার কোতয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে অভিযানে নামে ডিবি পুলিশ। মোবাইলের কললিস্টের সূত্র ধরে ডিবি’র এসআই শাহ কামাল আকন্দ ও এসআই সহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্নস্থানে অভিযান চালায়। রবিবার গভীর রাতে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মীরপুর এলাকা থেকে ডিআইজি মাহবুব পরিচেয়ে প্রতারণাকারী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার চরইসলামপুর গ্রামের কালু মিয়ার পুত্র জাকির হোসেন (২৪) এবং তার সহযোগী একই গ্রামের মৃত আবদুল লতিফের পুত্র জাহাঙ্গীর মিয়া (৩০) ও গণেশ রামপুর গ্রামের দানা মিয়ার পুত্র খলিলুর রহমানকে (৩০) আটক করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভুয়া ডিআইজি মাহবুব জানায়- সে ও তার সহযোগিরা কখনো ডিআইজি, কখনো ওসি আবার কখনো গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত সরকারি কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছিল। জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসি একেএম মনজুর আলম জানান, প্রতারকচক্র মোবাইল নাম্বার ডাইভার্টের মাধ্যমে প্রতারণা করে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। তাদের গ্রেফতার করে সোমবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ভুয়া ডিআইজি মাহবুব প্রতারক জাকির হোসেন কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুস্তাইন বিল্লাহ’র আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে।