এম এস শফি: কুমিল্লার বিভিন্ন গ্রামে কপি’র চারা উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। জেলার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি সমেষপুর,হরিণধরা,বাজেবাহেরচর ছাড়াও সৈয়দপুর এলাকায় কৃষকরা আগাম শীতকালীন ফুল ও বাধাঁ কপি’র চারা নিয়ে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মাঠে পরিশ্রম করছে। ফলে । এইসব এলাকার গ্রামজুড়ে কৃষকদের মুখে হাসি। এসকল গ্রামের প্রায় ৩/৪’শ পরিবার ব্যস্ত সময় পার করছে কপি’র চারা উৎপাদনে। এখানে মূলত পরিবারের লোকজনই মাঠে টানা পরিশ্রম করছে। এখানকার উৎপাদিত চারা সারাদেশ থেকে এসে সব্জি চাষীরা নিয়ে যাচ্ছে । এর সাথে রয়েছে টমেটো আর কাচাঁমরিচের চারাও তারা উৎপাদিত করছে তবে সেটা পরিমানে কম। এখানকার কৃষকরা প্রতিবছর আগাম শাকসব্জি’র বিশেষ করে ফুল ও বাধাঁ কপি’র ২/৩ কোটি টাকার চারা উৎপাদন করে। আগাম সব্জি উৎপাদনে তাই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কৃষকরা এখানে এসে চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবে আগাম চারা উৎপাদন করে এখানকার কমপক্ষে ৩ শতাধিক পরিবারে এসেছে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা। এছাড়াও ময়নামতির পাশে সৈয়দপুর গ্রামেরও আরো অর্ধশতাধিক পরিবার একইভাবে কপি’র চারা উৎপাদন করছে। অর্থনৈতিকভাবে তারাও স্বাভলম্বি হচ্ছে প্রতিবছর। এভাবেই এখানকার ৫/৬ টি গ্রামের প্রায় ৩/৪’শতাধিক পরিবার দিন-রাত চারা উৎপাদন পরিশ্রম করছে।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি ইউনিয়নের সমেষপুর,হরিণধরা,বাজেবাহেরচর ছাড়াও আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রতিবছর কয়েক শ’ পরিবার আগাম শীতকালীন কপি’র চাঁরা উৎপাদন ও বিপণন করছে।সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিবারের লোকজন ব্যস্তসময় পার করছে মাঠে।
ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বীজতলা তৈরী,পরিচর্যাসহ চারা উৎপাদন,বিক্রিতে তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। সমেষপুর গ্রামের কৃষক রাসেলের সাথে কথা হয় বীজতলায়। তিনি বলেন,সকাল থেকেই কাজ শুরু হয় জমিতে। এর মাঝে আসে চারা ক্রয়ে ক্রেতারা। তাদের কে গুনে গুনে চারা দিতে হয়।
চারা উৎপাদন ব্যয় প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন সাইজের বীট করে বীজতলা বানানো হয়। বীজতলার মাটি পরিচর্যায় প্রথমে জমির মাটিকে একেবারে মিহি করতে হয়। এরপর বীজ রোপন শেষে পলিথিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় জমি। প্রতিদিন এভাবে পানি দেওয়ার পাশাপাশি রোদের তাপ থেকে রক্ষা করতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হয় বীজতলা। এভাবে কিছুদিন পরিচর্যার পর যখন চারা আলোর মুখ দেখে তখন এক প্রকার জমিতেই পুরো সময় ব্যস্ত থাকতে হয়। সারাদিন পরিশ্রম করতে হয় । একটু পরপর বীজতলায় পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হচ্ছে। আবার যখন ক্রেতারা আসছে তাদের চারা তুলে দিচ্ছেন। এভাবেই বীজতলায় সারাদিন ব্যস্ত সময় পার করছেন। রাসেল আরো বলেন,আমরা কপি’র চারা বিক্রির যে বীজতলা করি সেটাকে বীট বলা হয়। একটা বীটের আকার লম্বায় ১২ হাত এবং প্রস্থে আড়াই হাত। প্রতিটি বীটে কমপক্ষে ১২’শ টাকার বীজ প্রয়োজন। এর থেকে উৎপাদন হয় কমপক্ষে ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার চারা। প্রতি হাজার চারার মূল্য ফুল কপি ৮’শ এবং বাধাঁ কপি ৬’শ টাকা। একই এলাকার চাষী আনোয়ার মেম্বার জানান,তিনিও দীর্ঘদিন ধরে চারা উৎপাদন ও বিক্রির সাথে জড়িত। অনেকের পরিবারে সদস্য কম থাকায় তারা দিন প্রতি ৩’শত টাকা ছাড়াও থাকা খাওয়ার চুক্তিতে শ্রমিক নিয়োগ করছে। রাসেল,আনোয়ারসহ চারা বিক্রেতারা আরো জানান,এখানকার উৎপাদিত চারা কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও সারাদেশ থেকে ক্রেতারা এসে চারা ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। কৃষক রাসেল বলেন,তার এমন শতাধিক বিট রয়েছে। সে একাই প্রতি বছর ৬/৭ লাখ টাকার চারা বিক্রি করছে। আর পুরো সমেষপুর গ্রামে কৃষকরা চারা উৎপাদন থেকে আয় করছে কমপক্ষে দু/আড়াই কোটি টাকারও বেশী। তারা আরো বলেন,ইষ্টওয়েস্ট,এসিআই,কাসেম সীড,সাকাতা,ইউনাইটেড ,সিনজেনটা,এটলাসকোম্পানীর বীজ এখানকার কৃষকরা ব্যবহার করছে। ফলে উল্লেখিত কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত সমেষপুর গ্রামে এসে কৃষকদের খোঁজখবর নিচ্ছেন। সমেষপুর গ্রামে চারা ক্রয় করতে আসা কালাম মিয়া নামের এক কৃষক জানান,এখানকার উৎপাদিত হোয়াইট আইসল্যান্ড,মিল্কওয়ে প্রজাতির ফুলকপি এবং অটাম কুইন ,সুপ্রীম কুইন প্রজাতীর বাধাঁ কপি’র চারা উন্নত মানের। তিনি বেশ ক’বছর ধরে এখান থেকে চারা ক্রয় করে নিয়ে চাষাবাদ করছেন। ্এতে তিনি ভালো ফলনও পাচ্ছেন।