একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
এ পৃথিবীর বুকে অনেক গাছপালা জন্মায়। যেমন আম, জাম, লেচু, কাঁঠাল, আরও কত ধরনের ফুল ও ফলের গাছ তার কোনো অন্ত নেই। আবার বনজঙ্গলে কাঁটার গাছ ও পথপ্রান্তরে আগাছাও জন্মে। এ ভিন্নতার কারণ কী? এ ভিন্নতার কারণ হচ্ছে চারা ও বীজের ভিন্নতা। যদি আমের বীজ রোপণ করা হয়, তাহলে আম গাছ জন্মায়, যদি জামের বীজ রোপণ করা হয়, তাহলে জাম গাছ জন্মায়, যদি কাঁঠাল গাছের বীজ রোপণ করা হয়, তাহলে কাঁঠাল গাছ জন্মায়। আর যদি কাঁটার বীজ রোপণ করা হয়, তাহলে কাঁটা গাছই জন্মায়। এর দ্বারা বোঝা গেল, গাছ ও ফুল-ফলের ভিন্নতা বীজের ভিন্নতার কারণেই হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে কোনো কোনো মানুষ থেকে সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়-ইনসাফ, অন্যের কল্যাণকামিতা ইত্যাদি মহৎ চরিত্র প্রকাশ পায়। আবার কোনো কোনো মানুষ থেকে চুরি-ডাকাতি, খুনখারাবি প্রকাশ পায়। এমনকি কোনো কোনো মানুষ থেকে কুফর ও শিরকও প্রকাশ পায়। মানুষের কাজের এ ভিন্নতার কারণ কী? এর কারণ হচ্ছে প্রত্যেকে নিজের হৃদয়ের ভূমিতে যে ধরনের বীজ রোপণ করেন, সে ধরনের ফলই প্রকাশ পায়। কেউ যদি তার হৃদয়ের ভূমিতে ভালো বীজ রোপণ করেন, তাহলে তা থেকে ভালো ফল তথা সততা, সত্যবাদিতা, ন্যায়-ইনসাফ, অন্যের কল্যাণকামিতা ইত্যাদি মহৎ চরিত্র প্রকাশ পায়। আর কেউ যদি তার হৃদয়ের ভূমিতে খারাপ বীজ রোপণ করেন, তাহলে খারাপ ফল তথা মিথ্যা, চুরি-ডাকাতি, যেনা-ব্যভিচার, খুনখারাবি ইত্যাদি মন্দ ফল প্রকাশ পায়। তাই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কালেমায়ে তায়্যিবাকে অতি উত্তম বৃক্ষের সঙ্গে উপমা দিয়েছেন, যার থেকে সর্বদা ভালো ফল প্রকাশ পায়। আর কুফর ও শিরককে খবিশ কালিমার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যার থেকে সর্বদা মন্দ ফল প্রকাশ পায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে এরশাদ করেন, ‘আপনি লক্ষ করুন, আল্লাহ কেমন উপমা পেশ করেছেন, পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মতো। যার শিকড় মজবুত, আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশ পানে উত্থাপিত হয়। তার প্রতিপালকের আদেশে সর্বদা ফল দান করে থাকে। আল্লাহ মানুষের জন্য উপমা পেশ করেন, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে।’ (সূরা ইবরাহিম : ২৪-২৫)।
আল্লাহ তায়ালা কালেমায়ে তায়্যিবাকে এমন এক বৃক্ষের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যার শিকড় মাটির অনেক নিচে মজবুতভাবে প্রথিত। আর তার শাখা-প্রশাখা আকাশ পানে উত্থিত হয়। তাই এ বৃক্ষকে ঝড়-তুফান উপড়ে ফেলতে পারে না। উপরন্তু এ বৃক্ষ সর্বদা তার প্রতিপালকের নির্দেশে ফল দিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে যারা নিজেদের হৃদয়ের ভূমিতে কালেমায়ে তায়্যিবার বীজ বপন করেন এ বীজ থেকে তাদের হৃদয়ের ভূমিতে ঈমানি বৃক্ষ জন্মায়, যার শিকড় তাদের হৃদয়ের গভীরে এমন মজবুতভাবে প্রথিত থাকে যে, বিপদাপদের ঝড়-তুফান, অর্থসম্পদের প্রলোভন, জীবননাশের ভয়ভীতি কোনো কিছুই তাদের বিশ্বাস টলাতে পারে না। উপরন্তু তাদের থেকে সর্বদা সত্যবাদিতা, ন্যায়-ইনসাফ, অন্যের কল্যাণকামিতা ইত্যাদি মহৎ আখলাকের ফল প্রকাশ পায়।
এর প্রমাণ হচ্ছে ইতিহাসের সুদীর্ঘ পরিক্রমায় অনেক জাতির উত্থান-পতন ঘটেছে। তাতার বাহিনী একসময় উল্কার মতো পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত তছনছ করে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই বুদবুদের মতো তাদের প্রভাব মিলিয়ে যায়। পক্ষান্তরে কালেমায়ে তায়্যিবার বীজ একবার যাদের হৃদয়ে রোপণ করা হয়েছে। এ বাণী তাদের হৃদয়ের ভূমিতে স্থায়ীভাবে বদ্ধমূল হয়ে গেছে। শত জুলুম-নির্যাতন তাদের ইসলাম থেকে দূরে সরাতে পারেনি। তবে কাক্সিক্ষত ফল পেতে হলে জমিনে যে বীজ বপন করা হয় শুধু সে বীজ উন্নত হলেই চলে না, বরং বীজ উন্নত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজের উপযোগী উর্বর ভূমিও হতে হয়, তাই যদি কেউ আরব দেশের উন্নত খেজুরের বীজ বাংলাদেশের ভূমিতে রোপণ করেন, তাহলে কাক্সিক্ষত ফল পাবেন না। আর যদি রাজশাহীর আমের বীজ ঢাকার ভূমিতে রোপণ করেন, তাহলেও কাক্সিক্ষত ফল পাবেন না, কারণ বীজের উপযোগী ভূমি উর্বর হয়নি। অনুরূপভাবে কারও কাছ থেকে কাক্সিক্ষত মহৎ আখলাক প্রকাশ পেতে হলে তার হৃদয়ের ভূমিও কালেমায়ে তায়্যিবার উপযোগী উন্নত হতে হবে। তবেই কাক্সিক্ষত ফল তথা মহৎ আখলাক পাওয়া যেতে পারে। এ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মানুষ হচ্ছে স্বর্ণ-চাঁদির খরির মতো, জাহেলি যুগে যে উত্তম ছিল ইসলামেও সে উত্তম হবে। যদি তারা ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে।’ (মুসলিম : ৬৮৭৭)।
খবিশ কালেমার দৃষ্টান্ত আমাদের চারপাশে কিংবা বনজঙ্গলে কত ধরনের আগাছা জন্মায়। আর এসব আগাছায় না কোনো ফল হয়, না এগুলো মানুষের কোনো উপকারে আসে। তাই এসব আগাছার কোনো মূল্যই মানুষের কাছে নেই। তাছাড়া এগুলোর শিকড়ও মাটির সঙ্গে ততটা মজবুতভাবে প্রথিত থাকে না। তাই অতি সহজেই এগুলো উপড়ে ফেলা যায়। এসব আগাছাকে আল্লাহ তায়ালা খবিশ কালেমার সঙ্গে সাদৃশ্য দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা কালামে পাকে এরশাদ করেন, ‘আর নোংরা বাক্যের উপমা হচ্ছে নোংরা বৃক্ষ, যা মাটির ওপর থেকে উপড়ে ফেলা হয়। যার কোনো স্থায়িত্ব নেই।’ (সূরা ইবরাহিম : ২৬-২৭)।
অনুরূপভাবে আমাদের মাঝে কত ধরনের চিন্তাচেতনা ও মতাদর্শের উদভব ঘটে, আরও কত ধরনের মতাদর্শের উদভব ঘটবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তবে মানবীয় চিন্তাধারার আলোকে যেসব মতাদর্শ ঘটে চলছে সবই খবিশ কালেমার মতো। না এসব চিন্তাধারা ও মতাদর্শের আলোকে মানুষ ইহজীবনে সুখ-সফলতা লাভ করতে পারছে, না পরজীবনে লাভ করতে পারবে। বরং এসব মতাদর্শের কোনো স্থায়িত্বও নেই। তাই একসময় যে কমিউনিজম মানুষের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। মানুষ মনে করেছিল তাতেই তার চির সাফল্য নিহিত রয়েছে। বিশেষ করে শ্রমিক শ্রেণী তাই মনে করেছিল; কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই মানুষ এর কুফল বুঝতে পেরে তা ঝেটে ফেলে দেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে।