অনলাইনডেস্ক: কারাগারে থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ভারতের মাওবাদী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেত্রী ঠাকুরমণি মুর্মু। মাওবাদীরা যাকে ‘তারা’ বলে ডাকেন।
‘তারা’ নামের এই মাওবাদী নেত্রী এখন রয়েছেন ভারতের দমদম কারাগারে। আর সেখানে থেকেই পাঁচটি লেটার মার্কসহ ৮৩ শতাংশ নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের পশ্চিম মেদিনীপুরের সাঁকরাইলের ওসি অপহরণ, শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলাসহ একাধিক মামলায় অভিযুক্ত বছর দেড়েক আগে গ্রেপ্তার হন ‘তারা’। এরপর থেকেই শুরু হয় ‘তারা’র কারা জীবন।
প্রথম দিন থেকেই কারা কর্তৃপক্ষকে বিরক্ত করতেন তিনি। কারাগারের অন্যান্য কয়েদিদের মতো নিয়ম মেনে চলতেন না।
সে সময় তারাকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে, তার মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগাতে চেষ্টা করেন কারাগারের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লিলি পোদ্দার। এতে সাহায্য করেন এক সেচ্ছাসেবী সংগঠন। হঠাৎ করেই বদলে যেতে শুরু করেন ঠাকুরমণি ওরফে তারা।
একদা আগেয়াস্ত্র ধরা হাত তুলে নেয় রঙ, তুলি আর ক্যানভাস। জেলে তারা ছবি আঁকা শেখা শুরু করেন। সঙ্গে এসে যোগ দেয় সাঁওতালি ভাষার গান।
পরিবর্তন আসতে শুরু করে এ শালবনি মাওবাদী নেত্রীর মধ্যে। ছবি আঁকা, গান ও নাচের মধ্যে দিয়েই যেতে থাকে তারার জেল জীবন।
হঠাৎ একদিন পড়াশুনায় মন দিতে ইচ্ছা করে তারার। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। শুরু তারার পড়ালেখা।
প্রতিদিনই হোমওয়ার্ক করতে থাকেন তারা। এসময় প্রায় মধ্যরাতে তারার সেলে আলো জ্বলতে দেখতে পেতেন দমদমের কারারক্ষীরা। পড়ালেখার প্রতি তারার এমন মনযোগ দেখে জেল কর্তৃপক্ষ পুরদমে সাহায্য করতে থাকে তাকে। এভাবে মধ্যরাতে না ঘুমিয়ে পড়াশুনা করে সিলেবাস শেষ করেন তারা।
জুন মাসে ভারতে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন তারা। গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পরীক্ষায় তারার এমন ফলাফলে দমদম কারাগারে যেন খুশির বন্যা বইছে।
সাত বিষয়ে মধ্যে পাঁচটিতে লেটার নিয়ে ৫৭৯ নম্বর পেয়েছেন তারা। তারা এবার উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবেন বলে জানিয়েছে দমদম কারা দপ্তর সূত্র।
ইতোমধ্যে ‘তারা’কে নিজের ‘মেয়ে’ বলে আখ্যায়িত করেছেন দমদম জেল সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভিতরে খিদে থাকে। আমার মেয়ে ঠাকুরমণি তার খিদেটা সুন্দর ভাবে প্রস্ফুটিত করেছে।’ ছবি : সংগৃহীত