একাত্তরলাইভডেস্ক: পূজার স্মৃতি তিনভাবে ফিরে আসে। প্রথমেই বলব, সাভারের আশুলিয়াতে আমাদের বাড়ি। বড় হয়েছি আশুলিয়াতেই। আমাদের বাড়ির যে অংশ তার আশেপাশে অনেকগুলো হিন্দু পরিবার বসবাস করে। ওখানে অনেক বড় পূজার আয়োজন করা হয়।ছোটবেলা থেকেই পূজা এলে উপোস করতাম। মায়ের সঙ্গে পূজা দেওয়ার যোগাড় করে দিতাম। সকাল সকাল ফুল তোলা, চন্দন বাটা, পূজার থালা সাজানো এগুলো করতাম। আর অঞ্জলি দেওয়া তো ভিশনভাবে এনজয় করতাম। প্রতি দুর্গাপূজায় বাড়িতে অনেক আত্নীয়-স্বজন আসতো। লোক সমাগম আমি আবার একটু এড়িয়ে চলি। ছোটবেলা থেকেই প্রাইভেসি পছন্দ করি। নিজের সার্কেলে থাকতে চাই। তাই বলে দুষ্টামি করি না, তা কিন্তু নয়।পূজা মণ্ডপে ‘আল্টি’ নাচতাম। মানে, ধূপ নিয়ে নাচতাম। চারিদিকে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ত, ঢোলের বাদ্যির তালে তালে নাচতাম। মণ্ডপ ঘিরে রাখতো আমার কাজিনরা। মণ্ডপে যখন ভিড় কমে আসতো বেশির ভাগ লোকজন বাড়িতে চলে যেত তখন শুরু করতাম নাচ-গান। আর বিভিন্ন রকম খাওয়া-দাওয়া তো ছিলই।পূজা উপলক্ষে অনেকের কাছ থেকে নতুন জামাকাপড় পেতাম। পঞ্চমী থেকে শুরু করে একেক দিন একটা করে পরতাম। আর প্রতিদিন আনন্দের নতুন নতুন উপলক্ষ্য তৈরি হতো। আমি যখন হাই স্কুলে পড়ি তখনকার কথা মনে আছে, পূজায় অন্তত একদিন শাড়ি পরতাম। দিনে দুই তিনটা মণ্ডপে ঘুরতে যেতাম। বাড়িতে ছিলাম অনেক বেশি স্বাধীন।এসএসসি পাশ করার পর পড়তে গেলাম টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমসে। হোমস থেকে মন চাইলেই বের হওয়া যেত না। পূজা এলে বের হতে দিত। আর এই সুযোগটা কাজে লাগাতে গিয়ে পড়েছিলাম বিপদে। মণ্ডপে যাওয়ার নাম করে কয়েক বন্ধু মিলে টাঙ্গাইলের এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পর কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল আমাদের। মনে আছে ১৫-২০ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম। সেই শাস্তির স্মৃতি মাঝে মাঝে স্বস্তির কারণ হয়ে ফিরে আসে।বিয়ের পর থেকে কলাবাগান, বনানী এইসব জায়গায় পূজা দিতে যাই। ঢাকার বিভিন্ন মণ্ডপে ঘোরাঘুরি করি। মণ্ডপে আরো যারা আসেন, তাদের অনেকে দেখে চিনেও ফেলেন। কিন্তু একটা পরিবর্তন স্পষ্ট, লোকজন আগের মতো কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রী দেখলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে না। এর ফলে উৎসবের আমেজটা ঠিক থাকে। বাসায় নিজ হাতে রান্না করি। বিশেষ করে খিচুরি আর নিরামিষ, এই খাবার রান্না করা হয়ই।নবমী বা দশমীর দিন- আমি, আমার হাজবেন্ড, আরো কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে আশুলিয়াতে যাই। সেই যে পুরোনো অভ্যাস, ‘আল্টি’ নাচা! অভ্যাসটা কিন্তু ছাড়িনি।
কান ধরে বিশ মিনিট দাঁড়িয়ে ছিলাম : মৌসুমী
October 11, 2016