কক্সবাজার রেজিস্ট্রী অফিসে ঘুষ দিয়েও মিলছেনা সেবা

মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার
আগামী ১৭ মে জেলা জজআদালতে মামলার শুনানী। হাতে থাকা পুরানো দলিলের ফটোকপি দিয়ে মামলা দায়ের করেছিলাম। কিন্তু আদালত আদেশ দেয় সহিমুহুরী নকল কপি দায়ের করার জন্য। আদালতের আদেশ অনুযায়ী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার সদর সাব রেজিস্ট্রী অফিসে সহিমুহুরী নকল কপির জন্য দরখাস্ত করি। ২ হাজার টাকা দিয়ে ১ সপ্তাহের মধ্যে নকল কপি দেয়ার কথা থাকলেও আজ অবধি নকল কপি পায়নি।

আদালতের দেয়া নির্দিষ্ট তারিখে নকল কপি দায়ের করতে না পারিলে আমার মামলাটি এক তরফা শুনানী হবে। খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। মনে হচ্ছে সামান্য নকল কপির জন্য তীরে এসে তরী ডুবার মতো হবে আমার মামলাটি। এভাবে হায়-হুল্লাস করে নকল কপি না পাওয়ার বেদনার কথা জানান সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের শামসুল আলম।
দীর্ঘদিন ধরে সহিমুহুরী নকল কপি সংগ্রহে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলাবাসীকে। নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত টাকা দেয়ার পরও নির্দিষ্ট সময় পাওয়া যায় না সহিমুহুরী নকল কপি। নকল নবীশদের বার বার আন্দোলন এবং রেকর্ড শাখায় কর্মরত কর্মচারীদের অনিয়ম দূর্নীতির ফলে সহিমুহুরী নকল প্রদানে দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে সাধারণ মানুষ।অন্যদিকে অফিসে নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার উপস্থিত না থাকার কারণে নির্ধারিত সময়ে নকল ডেলিভারি দেয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট নকল নবীশদের অনেকে। সরকারি হিসাব মতে একটি নকল কপি পাওয়ার জন্য সব মিলিয়ে সরকারি ফি সাড়ে ৪৫০ টাকার বেশি নয়, সেখানে নিয়মিত ১২০০ থেকে ২০০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে তবুও সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। সে হিসাবে দৈনিক অন্তত ৫০ টি নকল হলে প্রায় ৫০ হাজার টাকা অবৈধ আয় করছে এখান কার কর্মচারীরা।
জানা গেছে, বর্তমানে চকরিয়া সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে প্রতি সপ্তাহে রবিবার ও বৃহস্পতিবার সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের ২দিন নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পাদন একেএম শামসুজ্জামান । তিনি আবার পেকুয়া সাব-রেজিস্ট্রী অফিসেও খন্ডকালীন সময় দেন সপ্তাহে ১দিন এবং সপ্তাহে আরও ১দিন সময় দেন কুতুবদিয়া সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে।

এভাবে ১জন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে ৪ অফিস করানো হচ্ছে। যার জন্য জনসাধারণ জমি ক্রয়-বিক্রয় করিতে চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। অন্যদিকে সহিমুহুরী নকল সংগ্রহের অবস্থা আরও দুঃসহ পর্যায়ে রয়েছে। একটি সহিমুহুরী নকলের জন্য আবেদন করলে ১/২ মাস সময় অতিক্রান্ত হচ্ছে। সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে পাশাপাশি জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও মহেশখালী অফিসেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রী অফিস সূত্রে জানা গেছে নকলের জন্য ৫০ টাকার স্ট্যাম্প ফি ও দলিল অনুযায়ী প্রতি কপির জন্য ৩০ টাকা নেয়া হয়। অথচ এসব টাকার বিপরিতে নেয়া হচ্ছে মনগড়া টাকা। যার বিপরীতে বার্ষিক হিসেব করলে দেখা কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির বাণিজ্য।
মোহাম্মদ তুহিন নামের একজন জানান, ১ মাসের অধিককাল হচ্ছে আমি একখন্ড জমি নিয়েছি। নিবন্ধনের পরপরই সহিমুহুরী নকল কপির জন্য দরখাস্ত করেছি। টাকাও দিয়েছি প্রায় ১৫০০ টাকা। কিন্তু এরপরও নকল কপি পায়নি। যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে জানান, সদর অফিসে নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার নাই। সপ্তাহের ২ দিনে যতটুকু সম্ভব দেয়া হচ্ছে। এভাবে সিরিয়ালি দেয়া হবে।
ভুক্তভোগী অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, একটি প্রিন্টকৃত সহিমুহুরী নকল সংগ্রহ করতে সময় ব্যয় হচ্ছে ৩০/৪৫ দিন পর্যন্ত। আর হাতের লেখা কপি হলে আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রিন্টকৃত দলিলের নকল কপির জন্য ১২শ টাকা এবং হাতের লেখা দলিল হলে ২ হাজার টাকার চেয়েও বেশি দিতে হচ্ছে। যদি কোন কারণে আর্জেন্ট নকল কপির জন্য দরখাস্ত করা হয় তবে ৩-৪ হাজার টাকাও দিতে হয়। তারপরও নির্ধারিত সময়ে সকল পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে এসব নকল কপি সঠিক সময়ে না পাওয়ায় মামলা-মোকদ্দমা ও নামজারী খতিয়ান সৃজন করা সহ বিভিন্ন কাজে দারুন সমস্যা হচ্ছে।
সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা যায়, একটি সহিমুহুরী নকল কপি সংগ্রহ করতে ১/৩ দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারিত আছে। আর এর জন্য ফিঃ নির্ধারণ করা হয়েছে স্ট্যাম্প বাবদ ৫০ টাকা ও দলিলের প্রতি কপি জন্য ৩০ টাকা হারে।
কিন্তু নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ এবং নকল কপি ডেলিভারিতে সময় ক্ষেপনের ব্যাপারে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে হেমলাল বড়–য়ার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, নকল নবীশদের বার বার ধর্মঘটের কারণে নকল কপি ডেলিভারি দিতে সময় হচ্ছে। নির্ধারিত ফি আদায়ের ব্যাপারে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন দলিলের কপি অনুযায়ী সহিমুহুরী নকলের ফিঃ নির্ধারণ করা হয়। এসব বিষয়ে রেকর্ড কিপার অথবা সহকারী রেকর্ড কিপার সঠিক তথ্য জানবে বলে তিনি জানান।এদিকে সহকারী রেকর্ড কিপার অনুলিপি বড়–য়া এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয় নি।
চকরিয়া, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও সদর সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে খন্ডকালীন সাব-রেজিস্ট্রার একেএম শামশুজ্জামান জানান, আগের সাব-রেজিস্ট্রার নকল কপি ডেলিভারি দিত আমি না জানলেও আমার দায়িত্বকালীন নির্ধারিত সময়ে নকল কপি ডেলিভারি দেয়া হচ্ছে। অনেকটা আসলে একজন সাব-রেজিস্ট্রার দিয়ে ৪টি অফিস করা সম্ভব হয় না। তারপরও যতুটুকু সম্ভব নির্ধারিত সময়ে নকলকপি ডেলিভারি দেয়ার চেষ্টা করছি। আর অনিয়ম দূর্নীতির ব্যপারে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যান।এদিকে সংশ্লিষ্ট সমস্যা নিরসনের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।