কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের কর্মচারীদের বেতনের বিপুল টাকা আত্বসাৎ করা হয়েছে। আউটসোর্সিং কর্মচারীদের জন্য জেলা হিসাবে রক্ষন অফিস থেকে জন প্রতি মাসে বেতন উত্তোলন করা হয়েছে ১৪,৪৫০ টাকা কিন্তু তাদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯ হাজার টাকা সে হিসাবে ৮ মাসে তাদের বেতন খাত থেকে প্রায় ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা আত্বসাৎ করা হয়েছে।
তাও তাদের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা কোন রশিদ ছাড়াই জামানত কেটে রাখা হয়েছে। ভোক্তভূগিদের দাবী তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্টান গাউসিয়া, এবং মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক এবং কয়েক জন কর্মচারী মিলে এসব টাকা আত্বসাৎ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এ সব কর্মচারীদের উৎসব ভাতা এবং নববর্ষ ভাতার নামেও বিপুল টাকা আত্বসাৎ করার পায়তারা করছে কতৃপক্ষ। আর এসবের প্রতিবাদ করলেই চাকরী খেয়ে ফেলবে বলে হুমকি দেয় তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের বেশ কয়েকজন আউটসোর্সিং কর্মচারী জানান তারা ২০১৬ সালের জুন মাসে চাকরীতে যোগদান করে। গাউসিয়া সিকিউরিটি সার্ভিস নামের একটি প্রতিষ্টানের মাধ্যমে আমরা কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে কাজ পায়। সেই থেকে নিয়মিত যে যার অর্পিত দায়িত্ব অন্ত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করেছি।
প্রতিমাসে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১১ মাস একটাকাও বেতন দেয় নি। আমরা সবাই গরীব মানুষ তবুও কোন প্রকার মানবেতর জীবন যাপন করে চাকরী করে গেছি। সম্প্রতী ৯ মে আমাদের বকেয়া সহ সব বেতন দেওয়া হবে শুনে আমরা খুবই আনন্দিত হয়েছিলাম। কারন আমরা অনেক আগে থেকেই জানি আমাদের বেতন প্রতি মাসে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা, সে হিসাবে আমরা অনেক টাকা পাব।
কিন্তু সে দিন গাউসিয়ার কর্মকর্তা এসে আমাদের বেতন দিয়েছে মাসে ৯ হাজার টাকা হিসাব করে। জুন মাসের বেতন দিয়েছে মাত্র ৫ হাজার টাকা। আবার সেখান থেকেই প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে জামানত কেটে রেখেছে। এ বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে কতৃপক্ষ বলেছে সাথে সাথে চাকরী থেকে বহিস্কার করবে।
তাদের দাবী আমাদের সুপারভাইজার নামধারী সন্ত্রাসী সাইফুল এবং মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক তার বোন এবং তার বোনের জামাই আমাদের বেতনের টাকা মিলে মিশে আত্বসাৎ করেছে। এবং এখানে নামে ৪৫ জন কর্মচারী থাকলেও বাস্তবে ৩০ জনের বেশি নেই বাকী গুলো ভুয়া বিল ভাইচার করে সবাই মিলে আত্বসাৎ করে।
তাদের দাবী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ক্ষমতা অধ্যক্ষ স্যারের হাতে থাকলেও কার্যত সব ক্ষমতা হিসাব রক্ষক হুররমা আকতার খুকির হাতে, আমরা আউটসোর্সিং কর্মচারীরা কাজে যোগ করার পর থেকে যা দেখছি তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তার আপন ভাই সাইফুল কাজগে কলমে পিয়ন হলেও তাকে সুপারভাইজার হিসাবে আমাদের উপর বসিয়ে দিয়েছে। এবং তার স্বামী মাঈনুল এবং তার আপন বোনের স্বামী সায়েমকে সব সময় আমাদের শাষন করার জন্য ব্যবহার করে অনেক সময় মারধরও করেছে।
এর কোন প্রতিবাদ করলেই হঠাৎ করেই কোন অযুহাত ছাড়াই হিসাব রক্ষক বা তার ভাই সাইফুল আমাদের চাকরীতে না আসতে বলে এবং ২০ বা ৩০ হাজার টাকা দিয়ে আমাদের স্থলে তাদের গ্রামের লোকজন নিয়ে নেয়। ইতি মধ্যে বেশ কয়েক জন চাকরী হারিয়েছে।
আমার এ বিষয়ে অধ্যক্ষ কে বলেলও তিনি আমাদের কোন কথাই শুনেন না বরং খুকিদের পক্ষ নিয়ে আমাদের গালিগালাজ করতেন। তবে যাই হওক আমরা বেতন গুলো ঠিকমত পেলে শান্তি লাগতো। ৯ মে আমাদের ঠিাকাদার প্রতিনিধি দেলোয়ার সব্রা বেতনের চেক নিয়ে আসার সময় সুপারভাইজার নামধারী সন্ত্রাসী সাইফুল তাকে অপরহরণ করতে গাড়ী এবং লোকজন নিয়ে মেডিকেল কলেজের সামনে ছিল এবং তার বেগ ধরে টানা হেচড়াও করেছে।
পরে আমরা সবাই এগিয়ে আসলে দেলোয়ারে অপহরণ করতে পারে নি। সাইফুলের দাবী ছিল আমাদের চেক গুলো তার বা তার বোনের হাতে দেবে তারাই ইচ্ছামত আমাদের টাকা দিবে। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিনিধি দেলোয়ার সেটা না করা আমাদের কে চেক দিয়েছে কিন্তু টাকা দিয়েছে ৮ মাসের ৯০০০ টাকা করে। তবে দুঃখের বিষয় সেখান থেকেই ২০ হাজার টাকা করে জামানত বলে কেটে নিয়েছে।
সেই জামানত কখন ফেরত দেওয়া হবে সে রকম কোন চুক্তিও করেনি। সে হিসাবে শুধু কর্মচারীদের বেতন বাবদ প্রায় ২০ লাখ টাকার কাছাকাছি টাকা আত্বসাৎ করেছে। এছাড়া এখানে অংখ্য ভুয়া বিল ভাইচার করে লাখ লাখ টাকা আত্বসাৎ করা হচ্ছে যা আমাদের চোখের সামনেই কিন্তু কিছুই বলতে পারি না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান আমরা মেডিকেল কলেজের কর্মচারীদের জন্য প্রতি মাসে ১৪,৪৫০ টাকা করে চেক পরিশোধ করেছি তারা কত টাকা দিয়েছে সেটা তাদের ব্যাপার। তবে জানতাম এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা তৈরি হবে তাই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে রেখেছি।
দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান এর আগেও সরকারী হাসপাতালে ভুয়া কর্মচারী দেখিয়ে বিপুল টাকা আত্বসাৎ করা হয়েছিল, আমরা সে বিষয়ে তাদের সতর্ক করার পরও তাদের অনেক দুঃশাহস তারা এসব কাজ করছে। আর বিলে যেহেতু অধ্যক্ষ স্বাক্ষর করেছে তাই ঠিকাদার প্রতিষ্টান এর পাশি পাশি অধ্যক্ষ কখনো দায় এড়াতে পারে না। আর ঠিকাদার প্রতিষ্টান তারা নিয়োগ দিয়েছে।এছাড়া ও উক্ত কর্মচারীদের নামে উৎসব ভাতা জন প্রতি ৯০০০ টাকা করে এবং নববর্ষ ভাতা জন প্রতি ২৮৯০ টাকা করে একটি বিল ইস্যু করেছে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ। যদিও এখনো পাস হয় নি। তবে আমরা নিশ্চিত সেই টাকার এক টাকাও উক্ত কর্মচারীদের দেওয়া হবেনা।
এ ব্যপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের হিসাব রক্ষক হুররমা আকতার বলেন আমি সামান্য কর্মচারী এখানে আমাদের কোন হাত নেই, কতৃপক্ষ যা বলবে সেভাবে কাজ করাই আমার কাজ।ঠিকাদারী প্রতিষ্টান গাউসিয়ার প্রতিনিধি মোঃ দেলোয়ার বলেন ৯ মে বেতন পরিশোধ করতে গিয়ে দেখি সাইফুল নামের এক সন্ত্রাসী আমাকে টাকার ব্যাগ সহ অপহরণ করতে চেয়েছিল, কারণ তার নিয়োগ করা লোকদের আমি বেতন দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছি বলে।
আর সে কিভাবে আমাদের প্রতিষ্টানে লোক নিয়োগ করবে ? আমি জানতে পেরেছি সে অনেকের সহযোগিতায় বেশ কয়েক জন কে তাড়িয়ে দিয়ে টাকার বিনিময়ে তাদের নিয়োগ দিয়েছে। তারা আমাদের তালিকায় নাই , এছাড়া সত্যি বলতে আমার মনে হয় এখানে যারা হিসাব শাখায় কাজ করে তারা দুনিয়ার কোন আইন কানুন তোয়াক্কা করে না। আর তাদের চাহিদা এত বেশি যা আমাদের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়।
সে জন্য আমার সাথে বেশ কয়েক বার কথা কাটাকাটি হয়েছে। এছাড়াও অনেক ধরনের অনিয়ম করে। আর ১৪,৪৫০ টাকা বেতনের কখা স্বীকার করে বলেন এটা আমাদের প্রতিষ্টানের জন্য আমরা তাদের কি বেতন দেব সেটা আমাদের ব্যপার। আর ২০ হাজার টাকা জামানত নেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
এ সময় তিনি বলেন মেডিকেল কলেজ কতৃপক্ষ তাদের চাহিদা কমিয়ে দিলে আমরা আরো অনেক বেশি টাকা কর্মচারীদের দিতে পারবো। আর সাইফুলকে আমরা চাকরীচ্যুত করেছি তবে কেন জানি না কতৃপক্ষ তাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল করিম বলেন আউটসোর্সিং কর্মচারী এখানে নয়, পুলিশ সুপার, ডিসি অফিস সহ সব জায়গায় আছে আমি সবার ছেয়ে বেশি বেতন দিয়েছে। এবং টাকা কম দেওয়ার ব্যাখা চেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্টানকে নোটিশ দিয়েছি।