কক্সবাজার জেলায় আমনের বাম্পার ফলন

মাহাবুবুর রহমান
কক্সবাজারে এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলায়  ৭৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের চাষাবাদ করে ২ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ মেট্রিকটন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিল জেলা কৃষি অধিদপ্তর। তবে আবহাওয়া ভাল থাকায় এবার চাহিদার ছেয়ে ভাল ফলন হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এতে কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে, ইতি মধ্যে উৎপাদিন আমন মাঠ থেকে বেশির ভাগ কেটে ঘরে তুলেছে কৃষক। ফলন ভাল হওয়ায়  গ্রামে গঞ্জে ইতি মধ্যে নতুন চালের পিঠাপুলির উৎসব শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস সুত্রে জানা গেছে জেলায় এবার ৭৭ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা ধারন করা হলেও চাষাবাদ হয়েছে ৭৭ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রিড, উচ্চফলনশীল, এবং স্থানিয় জাতেরধান রোপন করে কৃষকরা। উপজেলা হিসাবে চকরিয়াতেই বেশি চাষাবাদ হয়েছে সেখানে সব জাত মিলিয়ে ১৯ হাজার ৩৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সদরে ৯ হাজার ১৩০ হেক্টর, পেকুয়াতে ৮ হাজার ৫০০ হেক্টর, রামুতে ৯ হাজার ৪০০ হেক্টর, উখিয়ায় ৯ হাজার ২০ হেক্টর, টেকনাফে ১০ হাজার ৮২০ হেক্টর, মহেশখালীতে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর, কুতুবদিয়ায় ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২ লাখ ৩ হাজার ৭০৮ মেঃ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধারন করা হয়েছিল তবে সে অনুপাতে আমনের উৎপাদন অনেক ভাল হয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নরে ঘাটকুলিয়া পাড়ার চাষি হাজী আলী আকবর বলেন আমাদের ২০ কানি জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। আমরা বাপ দাদার সময় থেকে চাষাবাদের সাথে জড়িত। এবার ফলন খুব ভাল হয়েছে। আমি আশা করেছিলাম কানিতে সর্বোচ্চ ৮০ আরি। তবে ধান কাটার পর ধারনা করছি ১০০ আরি পার হবে ইনশাআল্লাহ। আবার অনেক জমিতে ১২০ আরি হবে। আর ফলন ভাল হওয়ায় আমার খুবই খুশি তবে কৃষি উপকরনের দাম বেশি হওযায় আমাদের খরচ অনেক বেশি হয় সে খেত্রে কৃষি উপকরণের দাম কমালে আমরা আরো বেশি লাভবান হতাম। একই এলাকার ছব্বির আহাম্মদ বলেন জমিতে ধান রোপন করার পর মাঝ খানে একটু চিন্তাই ছিলাম কারন কয়েক টি ঘুর্নিঝড় হওয়ার সম্ভবনা ছিল বলে। তবে আল্লাহর রহমতে কোন সমস্যা হয় নি। বরং একটু একটু বৃস্টি হওয়ায় ধানের জন্য আরো ভাল হয়েছে তাই ফলন ভাল হয়েছে। আমাদের ইতি মধ্যে ৭০% ধান বাড়িতে চলে গেছে সেখানে ধান মাড়াইয়ের কাজ চলছে।
টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা চাষি আলী ফকির বলেন এবার ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে, এতে আমরা খুবই খুশি আমাদের পরিবার এবার ২৫ কানি জমিতে চাষাবাদ করেছিল প্রতি কানি জমিতে প্রায় ১০০ র উপরে ধান হয়েছে। ইতি মধ্যে বেশির ভাগ ধার বাড়িতে চলে গেছে বাকি ধান ও কাটা চলছে তবে ধান কাটতে গিয়ে মজুর খরচ অনেক বেশি আগে দৈনিক হিসাবে একজন মজুর কাজ করতো ৪০০/৫০০ টাকা এখন সেটা ৭০০ টাকার নিচে করেনা। আর সবাই ধান কাটার কাজ জানেও না। যারা ভাল জানে তাদের দাম অনেক বেশি। টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কৃষক নবিউল আলম বলেন আমার জমি থেকে ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বাড়িতে এখন উৎসবের আমেজ চলছে ইতি মধ্যে মহিলারা কয়েক দফা পিঠাপুলি বানিয়েছে তাদের মধ্যেও অনেক খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
এদিকে রামু চকরিয়া পেকুয়া সহ বেশ কয়েক টি গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এবার সব জায়গায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতি মধ্যে কৃষকরা ধান কাটা সম্পন্ন করেছে বাকি যে টুকু ধান মাঠে আছে তাই কাটায় ব্যস্ত কৃষক রা। তাই চারিদিকে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ এনায়েত ই রাব্বী বলেণ আমাদের কৃষক খুশি থাকলে আমরাও খুব খুশি থাকি কারন তারাই আমাদের প্রাণ। এবার বেশ ভাল ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় পরিবেশও ভাল থাকায় ধানের ফলন ভাল হয়েছে। এখন ৬০ % এর উপরে ধান কাটা হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আ ক ম শাহরিয়ার বলেন এবার জেলার সার্বিক পরিবেশ বেশ ভাল ছিল। কৃষকরা বেশ সময় নিয়ে মাঠ পরিচর্যা করতে পেরেছে সব মিলিয়ে একটি সুন্দর পরিবেশ থাকায় আমনের ফলন ভাল হয়েছে। এতে আমরা খুবই খুশি। তিনি বলেন বর্তমান সরকার কৃষি এবং কৃষকদের উন্নয়নে ভাল কাজ করছে। এবার সরকার ৩১ টাকা দরে চাল কিনবে। সেই সুযোগ গ্রহন করার জন্য সবাইকে আহবান জানান তিনি।