মাহাবুবুর রহমান
কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়ে উঠছে অসংখ্যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাহারী নামে এবং চটকদার বিঞ্জাপনে নিজ নিজ এলাকায় এসব স্কুল শিক্ষা বিকাশে অবদান রাখার কথা বল্লেও বাস্তবে সম্পূর্ন বানিজ্যিক উদ্যোশে গড়ে উঠছে বলে দাবী করছে স্থানীয় জনগন। তারা এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করছে নানান ধরনের হাকডাক দিয়ে। তাদের দাবী কেজী স্কুল নাম লাগিয়ে প্লে শ্রেনী বা কেজিতে ভর্তি ফি যদি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার হয় তা হলে তারা কেমন বিকাশ করছে ? নাকি নিজেদের আর্থিক উন্নয়নের জন্য এসব স্কুল নিয়ে বানিজ্যে নেমেছে। সচেতন মহলের দাবী গ্রামে গঞ্জে স্কুল হওয়া ভাল তবে সেটা কখনো অতি বানিজ্যিক ভাবে নয় এতে সমাজের ধনী গরিব বৈষম্য বাড়বে। যাদের টাকা আছে তারা ঐ সব স্কুলে পড়বে আর যারা আর্থিক ভাবে অসচ্ছল তারা পড়তে পারবে না এটা ঠিক না। সরকারের এ সব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার। আর যারা স্কুল করছে তাদের শুধু আর্থিক দিক বিবেচনায় না নিয়ে শিক্ষার মান নিয়ে চিন্তা করার আহবান জানান।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাও নাপিতখালী এলাকার প্রবীন শিক্ষক নুরুল কবির বলেন গত কয়েক বছরে এখানে ৪/৫ টি কেজি স্কুল গড়ে উঠেছে আমি বলবো না যে এসব স্কুলে শিক্ষার মান নেই। বলবো গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক বিবেচনায় এখানে শিক্ষা নিতে বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। যার ফলে সব শ্রেনীর মানুষ একই শিক্ষা পাচ্ছে না। চলতি বছরও সম্ভবত একিিট স্কুল গড়ে উঠেছে সেখানেও নাকি প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি ফি বাবদ ২৫০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। জালালাবাদ ইউনিয়নের আবদুল মজিদ বলেন এখন থেকে ৭/৮ বছ র আগেও এখানে সরকারি প্রাথমিক স্কুল ছাড়া তেমন কোন স্কুল ছিলনা। আমার প্রশ্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে কি আমরা স্কুলে শিক্ষকতা করছি না। কয়েক শত মানুষ এখন ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাকরি করছে, তারা কি মানুষ হয় নি। তাহলে এখন কেন এত কেজি স্কুলের ছড়াছড়ি, আর স্কুল করেছে ভাল কথা তাই বলে কি সেটা কে সম্পূর্ন বানিজ্যিক ভাবে নিতে হবে ? গত বছরের আগস্ট মাসের দিকে আমার পরিচিত কয়েক জন বেশ কয়েক বার আমাকে প্রস্তাব দিয়েছে সবাই মিলে স্কুল ব্যবসা করার জন্য। তাদের প্রস্তাব শুনে আমি বেশ হতবাক শুরুতেই বলে চল স্কুল ব্যবসা করি। শিক্ষাকে নিয়ে এত বেশি বানিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে না হলে আগামিতে একটি বড় সমস্যা তৈরি হবে।
মহেশখালী কলেজের কয়েক জন শিক্ষক বলেন এখানে স্কুল ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় ৮/১০ জন সিন্ডিকেট করে যে কোন সুবিধা জনক স্থানে একটি রুম নিয়েই শুরু করে দেয় স্কুল। প্রথমে কয়েক জন নিয়ে শুরু হলেও পরে ঠিকই ছাত্রছাত্রী জোগাড় হয়ে যায় এটা সত্য যে বেশির ভাগ স্কুল বানিজ্যি উদ্যেশেই গড়ে উঠে এবং তারা সফল ও হচ্ছে আবার তাদের দেখা দেখি আরো কয়েক জন মিলে একই ব্যবসা শুরু করে। এভাবে পুরু উপজেলাতে অনেক টা শিক্ষা নিয়ে চরম নৈরাজ্যময় ব্যবসা চলছে। আবার অনেক নেতারা এ সব স্কুলের পেছনে ভুমিকা রাখে তাতে ঐ স্কুলের আরো ভাল ব্যবসা হয়। তাদের দাবী আমাদের কলেজের ডিগ্রি ভর্তির ফি নেওয়া হচ্ছে ২২ শত টাকা আর সে সব স্কুলে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি ফি নেওয়া হচ্ছে ৩ হাজার টাকার বেশি। এর কোন মানে হয় না। আর মাঝে মধ্যে দেখি শিক্ষা কর্মকর্তারা সে সব স্কুলে গিয়ে তাদের গুনগান করছে অথচ তার পাশেই সরকারি স্কুলে ঐ কর্মকর্তা যাওয়ার দায়িত্ব থাকলেও সে যাচ্ছে না।
রামুর বেশ কয়েক জন শিক্ষাবিদ একই ভাবে বলেণ শিক্ষা নিয়ে এধরনের উন্মোক্ত বানিজ্যিক প্রতিযোগিতা আগে দেখা যায় নি। এর মধ্যে আবার অনেক শিক্ষকরাও জড়িয়ে পড়েছে এটা আরো দূভার্গ্য কারন যারা সমাজের অসংগতি ধরিয়ে দেবে তারাই টাকা আয়ের ধান্ধায় নেমে গেছে। এবং অনেকে স্কুল নিজের কর্তব্য কাজ রেখে তাদের ব্যবসা প্রতিস্টানে এসে সময় দিচ্ছে। আর শুধু কেজি স্কুল নয় অনেক মাধ্যমিক স্কুল ও গড়ে উঠেছে যারা একই ভাবে লেখাপড়া নিয়ে ব্যবসায় নেমেছে। আবার এসব স্কুলে শিক্ষক হিসাবে আছে উদ্যোক্তাদের ছেলে মেয়ে স্ত্রী এমন কি শশুর বাড়ির আত্বীয় স্বজনও সেখানে শিক্ষক হিসাবে আছে। যাদের নেই কোন প্রশিক্ষন বা শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা তবুও তাদের দিয়েই চলে এসব শিক্ষা প্রতিস্টান।
একই ভাবে উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়া, পেকুয়া, এমন কি দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়াতেও বেশ জমজমাট ভাবে গড়ে উঠেছে বানিজ্যিক স্কুল ব্যবসা।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর জাফর আহাম্মদ বলেণ শিক্ষা একটি প্রবিত্র জিনিস সেটা নিয়ে শতভাগ টাকা পয়সার চিন্তা করা উচিত নয়। হ্যা একটি স্কুল করলে অনেক খরচ আছে শিক্ষকের বেতন, টুল ব্যাঞ্চ আরো অনেক কিছু সে সব চিন্তা করে একটি টাকাতো নিতেই হবে তবে সেটা যেন কোন ভাবেই মানুষের উপর জোলুম না হয়। আমি অনেক সময় শুনি কেজি স্কুল গুলো নাকি নিজস্ব কিছু বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে দিয়ে সেটা কিনতে বাধ্য করে এটা খুবই অন্যায় কারন সরকার যে বই দিয়েছে সেটাই ঠিকমত পড়লে যথেস্ট। আবার এমনও শুনি সে সব বই নাকি পড়ানো হয় না। তবুও কিনতে হয়। সব মিলিয়ে বলতে হয় স্কুল করা ভাল সেটা যেন বানিজ্যিক উদ্যোশে না হয়। এলাকার সাধারন মানুষ জনকে যেন শিক্ষা দেওয়াই হয় আসল উদ্যোশ্য।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ বিশিষ্ট্য শিক্ষা বিদ প্রফেসর এম এ বারী বলেন শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার সেটা পাওয়া দেশের সব নাগরিকের সমান অধিকার। কিন্তু এখন যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে শিক্ষা নিয়ে দৈত নীতি বা কয়েক ধরনের শিক্ষা হচ্ছে বিশেষ করে প্রাথমিক স্থরে, একই গ্রামের এক শিশু পড়ছে কেজি স্কুলে আরেক শিশু পড়ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আরেক শিশু পড়ছে ইংরেজি মিডিয়ামে তাহলে কি সমাজে বৈষম্য হচ্ছে না ? বরং ছোট বেলা থেকে তাদের ভেতর ধনী গরিবের বৈষম্য চল আসছে। এটা মোটেও কাম্য নয়। একটি দেশে একই ধরনের শিক্ষা থাকা দরকার। আর আমার মতে বর্তমান সরকার শিক্ষা খেত্রে বেশ সচেতন দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয় এখন সরকারি শিক্ষকদের বেতন এখন অনেক বেশি সেখেত্রে প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় যদি এলাকায় লেখাপড়ার মান নিয়ে কাজ করে তাহলে কেজি স্কুল গুলোর দৌরাত্ব কমে আসবে। এবং সেটাও হওয়া দরকার।
বীর মুক্তিযুদ্বা এসএম কামাল হোসেন চৌধুরী বলেন আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম একটি বৈষম্যহীণ সমাজের অঙ্গিকার দিয়ে। সেই অঙ্গিকার এখন অনেক খানি বাধাগ্রস্থ, শুধু শিক্ষা খেত্রে নয় অনেক সেক্টরে আজ মুক্তিযুদ্বের সঠিক চেতনা হারিয়ে গিয়ে টাকার শক্তির কাছে পারজিত হয়েছে। তবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক তিনি চাইছে শিক্ষা সহ সকল স্থরে একটি শৃংখলা ফিরে আসুক। সে লক্ষেই কাজ করছে আমি মনে করি আমরা সফল হবো।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবিএম ছিদ্দিকুর রহমান বলেন আমি হলফ করে বলতে পারি প্রাথমিক শিক্ষার মান এখন অকেক বেশি উন্নত, কোন কেজি স্কুলের ফলাফল আমাদের চেয়ে ভাল নয়। আসলে মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। অভিবাবকরা মনে করে কেজি স্কুলে পড়লে তাদের সন্তান কে সবাই ভাল বলবে। সেটা ঠিক নয় আমি আহবান জানাবো সম্পূর্ন বিনা খরচে সরকারি স্কুলেই আপনাদের সন্তানকে ভর্তি করান।