কক্সবাজারে এসএসসির ফরম পূরন করতে না পেরে ৩ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন অন্ধকারে

মাহাবুবুর রহমান.কক্সবাজার : এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরন করতে না পারায় জেলায় প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর জীবন অন্ধকারে পতিত হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারের নির্দেশনার আলোকে টেস্ট পরীক্ষায় এক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীদের এসএসসি ফরম পূরনের সুযোগ না দিতে স্কুল কতৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়ার আলোকে কক্সবাজারের বেশির ভাগ স্কুলে বেশ কিছু শিক্ষার্থী সুযোগ পায় নি বলে জানা গেছে। বিশেষ করে গ্রামের স্কুল গুলোতে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরনে সুযোগ না দেওয়া তাদের শিক্ষা জীবনসহ সামগ্রিক ভাবে অন্ধকারে পতিত হয়েছে বলে জানান অভিবাবকরা। ইতি মধ্যে এসএসসি পরীক্ষা দিতে না পারায় অনেক ছেলে উশৃংখল জীবনের পথে হাটছে আর মেয়েদের বাল্য বিয়ে সহ নানান ধরনের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভবনা আছে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।এদিকে খোদ শিক্ষা প্রশাসনেও এই সিন্ধান্তকে ভাল ভাবে মেনে নিতে পারে নি বলে জানান কর্মকর্তারা।
কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর গৃহীনি আসমা আক্তার বলেন,আমার মেয়ে এবারে টেকপাড়ার আমেনা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল কিন্তু টেস্ট পরীক্ষায় দুই বিষয়ে খারাপ করে,মেয়ে প্রথমে আমাকে বলেনি পরে জানতে পারলাম সেখানে অনেক মেয়েকেই এসএসসি ফরম পূরনের জন্য সুযোগ দেওয়া হয়নি। এখন মেয়ে লজ্জায় ঘর থেকে বের হতে পারছেনা। এবং সব সময় বিষন্নতায় থাকে জানিনা কখন কি হয়। তার সাথে আরো অনেক মেয়েদের অবস্থা আমি জানি যাদের অনেককে তাদের পরিবার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য যে কোন ধরনের পাত্র খুচছে। ঘোনারপাড়া এলাকার মল্লিকা পাল নামের একজন জানান তার ভাগ্নি এবারে পৌর প্রিপ্যারাটরী স্কুল থেকে এসএসসি ফরম পূরন করতে না পারায় আত্বহত্যার চেস্টা করেছে পরে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সুস্থ্য হয়েছে। খুরুশকুল পালপাড়া এলাকার নাছির উদ্দিন জানান তার ছেলে খুরুশকুল স্কুল থেকে এবারে এসএসসি পরীক্ষার্থি ছিল কিন্তু ফরম পূরন করতে না পারায় এখন বেশ উশৃংখলা জীবন যাপন শুরু করেছে আমরা তাকে অনেক বুঝিয়েও ভাল পথে ফিরাতে পারছি না। তার দাবী গত বছর তিন বিষয়ে খারাপ করা ছেলেদেরকেও পরীক্ষার সুযোগ দিয়েছে তাহলে এখন আমরা কি দোষ করেছি। তারা এখন কলেজে গেছে আমি পরীক্ষা দিতে না পারলে সন্ত্রাসী হয়ে হয়ে যাব। কলাতলী এলাকার মাছ ব্যবসায়ি আজিম আলী বলেন,আমার মেয়ে পাগলের মত হয়ে গেছে ৫ দিন ধরে কোন খাওয়া দাওয়া নেই আমরা বাবা হিসাবে প্রধান শিক্ষক সহ সকলের পায়ে ধরেছি তার পরর কাজ হয়নি। তিনি বলেন,আসলে আমরা গরীব মানুষ আমাদের বড় মেয়েকে এসএসসি পাস করার পরে ভাল জায়গায় বিয়ে দিতে পেরেছি। জানিনা এখন কি হয়।
এদিকে রামু জারাইতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসাইনুল ইসলাম মাতবর বলেন,সরকারের নির্দেশনা থাকায় সব বিষয়ে পাস ছাড়া ফরম পূরন করা যাবে না। আমরা যেহেতু সরকারের বেতনভুক্ত তাই সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করাই আমাদের কাজ। তবে এলাকার অনেক অভিবাবক খুব অসন্তুষ্ট কারন তাদের ছেলে মেয়েকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছে তারা। কারন গ্রামের ছেলেমেয়েদের এমনিতেই পড়া লেখায় বেশিদিন ধরে রাখা যায় না। হয়তো মেয়েদের বাল্য বিয়ে হয়ে যায় আর ছেলেরাও কলেজে যেতে যেতে ঝরে পড়ে। কিন্তু এখন এসএসসির ফরম পূরন করতে না পারায় অনেক আগে থেকেই লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে। কারন আবার সামনের বছর পড়ালেখায় ফিরে আসার সম্ভনা খুব কম।পৌর প্রিপ্যার‌্যারটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন,সব বিষয়ে পাস করা ছাড়া ফরম পূরন করা বিষয়ে আগে থেকে নির্দেশনা ছিল কিন্তু এবারে দুদক,শিক্ষা বোর্ড,এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের ছিঠি আছে তাই এর নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তবে আমি মনে করি এর ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে লেখাপড়ার প্রতিযোগিতা বাড়বে।আর যারা ঝরে পড়বে তাদের জন্য বাউবি শিক্ষার ব্যবস্থা আছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে ২০১৭ সালে জেলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল প্রায় ১৭ হাজার এবারে ১৮ হাজারের বেশি আর বর্তমানে কত শিক্ষার্থী তার হিসাব আমাদের কাছে নেই তবে বর্তমানে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বেশির ভাগ স্কুলে রেকর্ড সংখ্যাক শিক্ষার্থী ফরম পূরন করতে পারিনি বলে খবর পাওয়া গেছে এবং সেটা গ্রাম পর্যায়ে বেশি। আর সে সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার হতে পারে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী বলেন,আমাদের স্কুলে ১৩ জন ছাড়া বাকি সবাইকে ফরম পূরন করা হয়েছে। তবে আমি মনে করি কক্সবাজারে যেহেতু শিক্ষার হার এমনিতেই কম তাই এই জেলার জন্য বিশেষ কোন সুযোগ থাকলে ভাল হতো। অপর দিকে সরকারের সিন্ধান্ত এক প্রকাশ সঠিক এতে লেখপড়ার মান বাড়তে পারে।
এদিকে কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী বলেন,একটা হিসাব আমরা সবাই জানি সেটা হচ্ছে যদি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০০ ছাত্র ভর্তি হয় তার মধ্যে ৫ম শ্রেনী পাস করতেই ৯০ জনে চলে আসে এর মধ্যে এসএসসি পর্যন্ত আসতে আসতে ৬৫ জনে চলে আসে কলেজে যেতে যেতে ৪০ জনে চলে আসে। আমার মতে যে শিক্ষার্থী ৯ম শ্রেনীতে রেজিষ্ট্রেশন করছে তাকে এসএসসি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া দরকার। আমি অনেককে দেখেছি যারা এসএসসি পরীক্ষা একবার দিতে পারে নি তারা আর স্বাভাবিক লেখাপড়ায় ফিরে আসতে পারেনি। মোট কথা তাদের আর বইয়ের সাথে সংযোগ করা যায় না। সে হিসাবে সেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়বে সেটাই স্বাভাবিক।
জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ছালেহউদ্দিন চৌধুরী বলেন,সরকারি চাকরী জীবি হিসাবে সরকারের নির্দেশনা মানা আমাদের দায়িত্ব। তবে দীর্ঘ দিন কক্সবাজারে আছি হিসাবে যেটা বলতে পারি এখানকার শিক্ষার হার অনেক কম সেটা উন্নত করার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। আরেকটি কথা বলতে পারে অনেক স্কুল থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়ার অভিযোগ পেলে সেটা তদন্তে গেলে সেখানে গিয়ে উল্টো ছাত্র এবং অভিবাবক সবাই অনুরোধ করে যেন তাদের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।