এসো হে বৈশাখ, এসো এসো : আজ শুভ নববর্ষ

অনলাইন ডেস্ক: এসো হে বৈশাখ, এসো এসো…, আজ শনিবার পহেলা বৈশাখ, বাংলা নতুন বছর ১৪২৫-এর প্রথম দিন। চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে শুক্রবার ১৪২৪ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হল নতুন বছর ১৪২৫। জীর্ণ-পুরাতনকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনার নতুন বছরে প্রবেশ করল বাঙালি জাতি। পহেলা বৈশাখে বর্ণিল উৎসবে মেতে উঠবে পুরো দেশ। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। রাজধানীসহ দেশজুড়ে থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো. আখতারুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌরসন ভিত্তি করে প্রবর্তন হয় নতুন এই বাংলা সন। ১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে।
দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা; যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারাদেশ। কাল বর্ষবরণের এ উৎসব আমেজে মুখরিত থাকবে বাংলার চারদিক। গ্রীষ্মের খরতাপ উপেক্ষা করে বাঙালি মিলিত হবে তার সর্বজনীন এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে। দেশের পথেÑঘাটে, মাঠে-মেলায়, অনুষ্ঠানে থাকবে কোটি মানুষের প্রাণের চাঞ্চল্য, আর উৎসব মুখরতার বিহ্বলতা।
পহেলা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান উৎসব উল্লেখ করে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলা নববর্ষে মহামিলনের আনন্দ উৎসব থেকেই বাঙালি ধর্মান্ধ অপশক্তির কূট ষড়যন্ত্রের জাল ভেদ করবার আর কুসংস্কার ও কুপমন্ডুকতার বিরুদ্ধে লড়াই করবার অনুপ্রেরণা পায় এবং জাতি হয় ঐক্যবদ্ধ। তিনি বলেন, নতুন বছর মানেই এক নতুন সম্ভাবনা, নতুন আশায় পথ চলা। বুকভরা তেমনি প্রত্যাশা নিয়ে নতুন উদ্যমে ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতি কাল আরো সোচ্চার হবে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মৌলবাদ ও জঙ্গি নিধনের দাবিতে।
নববর্ষ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। জাতীয় সংবাদপত্রগুলো বাংলা নববর্ষের বিশেষ দিক তুলে ধরে ক্রোড়পত্র বের করেছে। সরকারি ও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে নববর্ষকে ঘিরে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। বাঙালির এই প্রাণের উৎসবকে ঘিরে রমনা পার্কসহ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পুরোটাই ঢেকে দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা চাদরে। শুধু রাজধানী ঢাকাই নয় এ উপলক্ষে সারাদেশেই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে যৌথভাবে কাজ করছে সব সংস্থা। সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারি নিশ্চিত করতে বসানো হয়েছে কন্ট্রোল রুম, অবজারভেশন পোস্ট ও চেক পোস্ট। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি থাকছে গোয়েন্দা দলের সদস্য, বোমা ডিসপোজাল টিম ও মেডিক্যাল টিম।
এদিকে বর্ষবরণে আজ রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন সংগঠন নানা আয়োজন করেছে। বরাবরের মতোই দিনের প্রথম প্রভাতেই রমনার বটমূলের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘ছায়ানট’ ভোরের সূর্যের আলো দেখার সঙ্গে সঙ্গেই সরোদবাদন দিয়ে শুরু করছে বর্ষবরণের মূল অনুষ্ঠান। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপন ১৪২৫ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্ণাঢ্য কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। পহেলা বৈশাখ সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে চারুকলা অনুষদ থেকে বের করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ প্রতিপাদ্য ও মর্মবাণী ধারণ করে অনুষ্ঠিত হবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ২ বছর বিরতি দিয়ে এবার পহেলা বৈশাখে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহন করেছে।
বাংলা একাডেমি সকালে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে বইমেলাসহ বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে একাডেমি চত্বরে। বর্ষবরণ উপলক্ষে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রাঙ্গণে আয়োজন করেছে হাজারো কণ্ঠে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। মুত্তিযুদ্ধ জাদুঘর সকাল ৯টায় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। জাতীয় প্রেসক্লাব বর্ষবরণে তাদের সদস্য ও পরিবারবর্গের জন্য সকাল থেকেই খৈ, মুড়ি-মুড়কি, বাতাসা ও বাঙালি খাবারের আয়োজন রেখেছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিও অনুরূপ আয়োজন রেখেছে তাদের সদস্য ও পরিবারের জন্য।