অনলাইন ডেস্ক: ২০১৪ সালে ভোট ঠেকাতে গিয়ে যে শক্তি ক্ষয় হয়েছে, তার আর পুনরাবৃত্তি করতে রাজি নয় বিএনপি। ভোটের মাঠে থাকতে ইতোমধ্যে বিএনপির আসন ওয়ারি মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন দলের হাইকমান্ড। এ ছাড়া নির্বাচনের মাঠে এগিয়ে থাকার জন্য একটি আকর্ষণীয় ইশতেহার তৈরিতে কাজ করছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার ছাপানো হবে বলে জানিয়েছেন এই জোটের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
জানা গেছে, মনোনয়নের সাক্ষাৎ দিতে আসা সাড়ে চার হাজার নেতাকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র পাহারা দিতে দলের জন্য নেতাদের সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের অঙ্গীকারও নিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। এ ছাড়া পরিস্থিতি যাই হোক ভোটের মাঠে থেকেই মোকাবিলার প্রস্তুতির নিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, দলীয়ভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার শেষ করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোও। ইতোমধ্যে বিএনপি জামায়াত নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ২৩টি দল তাদের চাহিদা অনুযায়ী, আসনের তালিকা বিএনপিকে দিয়েছে। অপরদিকে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগও তাদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। দু-একদিনের মধ্যেই তারা এসব নিয়ে বিএনপির সঙ্গে বসবে।
ইশতেহার প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১১ দফার ভিত্তিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহার তৈরি করা হচ্ছে। তবে এটা আরো বিস্তৃত হবে। সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার সব রকম চেষ্টা এবার করা হবে।
ইশতেহার তৈরির বিষয়ে তিনি আরো বলেন, মূল বিষয় থাকবে জাতীয় ঐক্য, কথা বলার অধিকার, গণমাধ্যমের অধিকার, আইনের সংস্কার, দেশ মেরামত।
দলীয় স্বার্থেও ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ছাড় দিতে প্রস্তুত থাকতে বলেছে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। কোনো প্রকার সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন না দুই জোটের নেতারা। এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাঠে নামার। দুই জোটের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন বয়কট করার মতো কোনো চিন্তাই তাদের নেই। যেকোনো পরিস্থিতিতে এবার তারা নির্বাচনী মাঠে থাকবেন।
ঐক্যফ্রন্টের একজন শীর্ষ নেতা বলেন, সরকারি দল মনে করেছিল ৭ দফা দাবি না মানলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে অংশ নেবে না। এ সুযোগে তারা আবারও এরশাদসহ বি. চৌধুরীকে বিরোধী দলে রেখে আরেকটি নির্বাচনের পাঁয়তারা করছিল। এভাবেই পুনরায় ক্ষমতায় আসার চিন্তা ছিল তাদের। কিন্তু আমরা এবার আর আওয়ামী লীগকে সেই সুযোগ দেব না। দাবি আদায় করতে গিয়ে আন্দোলন করেও সব শক্তি ক্ষয় করব না। আর নির্বাচন থেকেও সরে আসব না।
তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ইতোমধ্যেই দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ছাড়া সবাই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আছে। তারপর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরাও নির্বাচনী মাঠে থাকবে। জনগণও আমাদের সঙ্গেই আছে। ডাক দিলেই মাঠে নেমে আসবে। আওয়ামী লীগ চাইলেও এবার আগের মতো ভোট ডাকাতি করতে পারবে না। প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট পাহারার মতো পরিবেশ তৈরি করা হবে।
এদিকে, ২০ দলীয় জোটের একজন শীর্ষ নেতা জানান, পুলিশ দিয়ে সরকার যতই হয়রানি করার চেষ্টা করুক, ২০ দলের নেতাকর্মীরা এবার মাঠ ছাড়বে না। কেন্দ্র দখল, জালভোট, ব্যালট ছিনতাইসহ ভোট ডাকাতি ঠেকাতে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিন্ড না জেনেও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের মাঠ ছাড়বে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের এমন বার্তাই দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, ভোটের মাঠের বর্তমান পরিস্থিতি একই রকম থাকবে না। মানুষ ভোটের অধিকার আদায়ের তাগিদে ঠিকই রাজপথে নেমে আসবে।