একাত্তরলাইভডেস্ক: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি ও উপকমিটিতে পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতারা।শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সভাপতিমণ্ডলীর প্রথম বৈঠকে কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি পদগুলো চূড়ান্ত হবে।এরপর উপকমিটি চূড়ান্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতারা কেন্দ্রীয় ও উপকমিটিতে অন্তর্ভুক্তির প্রহর গুনছেন।গত ২২ ও ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন কমিটির পথচলা শুরু হয়েছে। অষ্টমবারের মতো দলীয় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। আর টানা দুই মেয়াদে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের। এরপর দুই ধাপে ৪৩ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা হয়েছে।দলীয় সূত্রে জানা যায়, দুই দফায় কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণার ফলাফলে আওয়ামী লীগে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা হতাশ হয়েছেন। তাদের অনেকেই এখন উপকমিটিতে পদ পেতে মরিয়া হয়ে দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন।সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন প্রাক্তন সভাপতি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তিনি দুই দফায় কমিটি ঘোষণার পর থেকে ঘোষিত কমিটিতে সাংগঠনিক পদপ্রাপ্ত এক নেতার বাসায় ধর্ণা দিচ্ছেন। এ রকম চেষ্টা ও তদবিরে সময় পার করে অনেকেই এখন তাকিয়ে আছেন শুক্রবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সভাপতিমণ্ডলীর সভার দিকে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ নেতা জানান, ‘নেত্রী আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাকি পদগুলোতে তৃণমূল পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য নেতাদেরও অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করেছেন। অনেকে নেত্রীসহ বর্তমান ও প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দলীয় রাজনীতিতে কার কী অবদান? কার কী অতীত-বর্তমান তিনি সবই জানেন।’গণভবন সূত্রে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময় ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিপু মনি। এই তিন নেতা একান্তে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণভবন ত্যাগ করেন।আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ প্রাপ্তির দৌড়ে ছাত্রলীগের প্রাক্তন নেতাদের মধ্যে প্রহর গুণছেন শাহে আলম, শফি আহমেদ, ইকবালুর রহিম, ইসহাক আলী খান পান্না, শামসুল হক টুকু, রবিউল আলম বুদু, ইকবাল হোসেন অপু, বাহাদুর বেপারী, ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুস সবুর, লিয়াকত শিকদার, মারুফা আক্তার পপি, সাইফুজ্জামান শিখর, ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন, মোল্লা মো. আবু কাওছার, পঙ্কজ দেবনাথ, ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী, রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, কামরুল হাসান খোকন, জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপটন, মাহমুদ হাসান রিপন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।এদিকে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অনেক আগে থেকেই গুঞ্জন ছিল আগামী কমিটিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকদের পদ সংখ্যা কমছে।গত বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমণ্ডলীর প্রথম বৈঠক দলের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দলের গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদকের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১০০ করার যে বিধান রয়েছে, তার বাইরে যাব না। এই কমিটির সদস্য সংখ্যা ১০০ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন কমিটিতে কেন্দ্রীয় উপকমিটির পদগুলো এবার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেট করে প্রত্যেক সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যের নেতৃত্বে উপকমিটির সহসম্পাদকদের নির্বাচনী কাজে সংযুক্ত করা হবে। কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনায় সাংগঠনিক সম্পাদকের নেতৃত্বে এসব টিম দলীয় এজেন্ডা পালন করবে। তাই কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পদটি ‘প্রেসটিজিয়াজ ও ভাইটাল’ হবে।আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন অজয়কর খোকন, মনিরুজ্জামান মনির, দেলোয়ার হোসেন, মাজহারুল ইসলাম মানিক, আবুল কালাম আজাদ (কালাম), মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, শাহজাদা মহিউদ্দিন, এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার, খন্দকার হাসান কবির আরিফ, অসিত বরণ বিশ্বাস, সুভাষ সিংহ রায়, বলরাম পোদ্দার, শাখাওয়াত হোসেন শফিক, রতন সাহা, বিশ্বনাথ সরকার বিটু, গোলাম সারোয়ার কবির, সুশান্ত বাইন, ইব্রাহিম হোসেন মুন, শামসুল কবির রাহাত, মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ।এ ছাড়া আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক পদে প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতারা ব্যতীতও আঞ্চলিক নেতারাও উঠে আসবেন। এক্ষেত্রে সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন থেকেও নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা যায়।আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিভাগভিত্তিক সম্পাদকীয় পদের সহযোগী হিসেবে ১৯টি পদে পাঁচজন করে প্রায় ১০০ সহসম্পাদক থাকবে। কিন্তু সদ্য বিলুপ্ত কমিটিতে যার সংখ্যা ছিল পাঁচ শতাধিক। যে কারণে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও বিলুপ্ত কমিটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের সহসম্পাদকদের সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘উপকমিটিগুলোতে সহসম্পাদক পদ ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়েছে। পার্টি অফিসের সামনে যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে তিনিই পরিচয় দেন, আমি আওয়ামী লীগের সহসম্পাদক।’
উপকমিটিতে পদ পেতে মরিয়া প্রাক্তন ছাত্রনেতারা

October 28, 2016