ইলিশ এখন হাতের নাগালে

মাহাবুবুর রহমান: সুস্বাদু ইলিশ মাছ এখন নিম্ন আয়ের লোকজনের হাতের নাগালে। আজ থেকে ক’দিন আগেও স্বাদে ভরপুর জাতীয় মাছ ইলিশ নিম্ন আয়ের লোকজন চাইলেও খেতে পারতনা। কারণ আকাশছোঁয়া দাম। কিন্তু সেই দিন আর নেই। এখন ইলিশে ভরে গেছে মাছের বাজার। সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। ফলে লাভবান হচ্ছে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা। আর সস্তা দামে ইলিশ খেতে পেরে খুশি লোকজন।
শহরের মাছবাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, এখন রুই, কাতলাসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের চাহিদা কমে গেছে। কারণ দাপট চলছে ইলিশের। প্রায় সবাই কিনছে ইলিশ। যেই ইলিশ ক’দিন আগেও কেজিতে বিক্রি হয়েছে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকায় তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫শ অথবা ১ হাজার টাকায়। যেই ইলিশ এক-দের হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছিল তা এখন বিক্রি হচ্ছে আড়াই’শ থেকে পাঁচশ টাকায়। আর মাছ ব্যবসায়ীরাও ঝুঁকছে ইলিশ বিক্রির দিকে। সস্তা দামে বিক্রি হলেও চাহিদা রয়েছে বেশি।
আর এই সুদিনের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা বলছেন, সরকারের নেওয়া কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ডিম পাড়ার মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখার কারনেই এই ফলাফল। এভাবে প্রতি বছরের ন্যায় নির্দিষ্ট সময় মা ইলিশ ধরা বন্ধ করা হয় আর ঝাটকা ইলিশ না ধরা হয়, তাহলে প্রতি বছরই ইলিশ উৎসব চলবে সারাদেশে।
বড়বাজারে বাজার করতে আসা আব্দুল শুক্কুর নামে এক টমটম চালক জানান, তিনি ৩ কেজি ইলিশ মাছ কিনেছেন মাত্র ৭শ টাকায়। এটি তার কাছে স্বপ্নের মত। এত কম দামে এর আগে ইলিশ দেখেননি। তিনি খুবই সন্তুষ্ট অনেকদিন পর পরিবার নিয়ে ইলিশ খেতে পেরে।
বাহারছড়া বাজারের মাছ বিক্রেতা লিয়াকত মিয়া বলেন, ইলিশ ছাড়া অন্য মাছের চাহিদা কম। সবাই শুধু ইলিশ কিনছে সস্তা দামে পাওয়ায়। আর চাহিদা বাড়তি থাকায় তারাও বিক্রি করছে দেদারছে। লাভও হচ্ছে ভাল।
শহরের ফিসারী ঘাট এলাকার ফিশিং বোট ব্যবসায়ী ছাইফুল ইসলাম বলেন, এবারে তার মাছ ধরার ট্রলারে প্রায় ৮ হাজার ইলিশ ধরা পড়েছে। তিনি খুবই লাভবান হয়েছেন। শুধু তিনি নন। অন্যান্য অনেক ব্যবসায়ীরাও লাভবান হয়েছে। আর এসব ইলিশ ট্রাকে ট্রাকে করে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
কক্সবাজার মৎস্য গবেষণা ইনন্টিটিউটের গবেষক ড. মইনউদ্দিন আহম্মদ জানান, মা ইলিশ এবং জাটকা রক্ষায় জন্য বছরের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। একটি ইলিশ একবারে গড়ে দশ থেকে বারো লাখ ডিম ছাড়ে। মা ইলিশ যাতে ডিম ছাড়তে পারে সেজন্য প্রতিবছর অক্টোবর-নভেম্বও মাসে প্রায় ৩ সপ্তাহ দেশের ৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। যার ফলশ্রুতিতে এই ফলাফল।
এই সুদিনের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানিয়ে এডভোকেট সৈয়দুর রহমান চৌধুরী বলেন, মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সময় মাছ ধরা বন্ধ এবং ঝাটকা ইলিশ না ধরতে সরকারের কঠোর পদক্ষের ফলে আজ ধনী-গরীব সকলের ঘরে ঘরে চলছে সুস্বাদু ইলিশ রান্না। সবাই মনের মত করে খেতে পারছে ইলিশ মাছ। প্রতি বছর এই কঠোর পদক্ষেপ বজায় থাকলে সবার হাতের নাগালে থাকবে সুস্বাদু ইলিশ মাছ। এর ফলে আমিষের চাহিদা মেটার সাথে সাথে আর্থিকভাবে আরো একধাপ এদিয়ে যাবে বাংলাদেশ।