ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই তিন জয়

ক্রীড়া ডেস্ক : প্রথম ১২ ম্যাচের সব কটিতেই হার। পরের চার ম্যাচের তিনটিতেই জয়।এই হলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ১৬ ওয়ানডের ফল। ইংল্যান্ডের জয় ১৩টি, বাংলাদেশের তিনটি। আবার বাংলাদেশের সামনে ইংল্যান্ড।শুক্রবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি দুই দল।তার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই তিন জয়ের গল্প।১০ জুলাই ২০১০, কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল :বাংলাদেশের দেওয়া ২৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ১৬৬ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছিল ইংল্যান্ড। ওপেনার অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের বিদায়ের পর ক্রিজে আসা জোনাথন ট্রট তখনও এক প্রান্তে লড়ে যাচ্ছেন। অষ্টম উইকেটে তিনি স্টুয়ার্ট ব্রডকে নিয়ে গড়লেন ৪৩ রানের জুটি। মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজের শেষ স্পেলে এসে প্রথম বলেই ব্রডকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাকিব আল হাসানের ক্যাচ বানিয়ে ভাঙলেন এ জুটি।এরপর মাশরাফির দশম ওভারের শেষ বলে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে জেমস অ্যান্ডারসন ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ফিরলে বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা উদ্‌যাপন শুরু করে দিলেন। সবাই ভেবেছেন ম্যাচ শেষ, কেউ একজন স্টাম্পও তুলে ফেললেন। কারণ ফিল্ডিংয়ে চোট পাওয়া ইয়ান বেল ব্যাট করতে পারবেন না বলেই মনে করেছিল সবাই। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্‌যাপন থামিয়ে ব্যাট হাতে নামলেন বেল! তার রানার এউইন মরগান। ম্যাচ গড়াল ইনিংসের শেষ ওভারে।শেষ ওভারে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের চাই ১০ রান। ব্যাটসম্যান ৯০ রানে অপরাজিত ট্রট। আর বোলার শফিউল ইসলাম। প্রথম দুই বল থেকে ট্রট ২ রান করে নিলেন মোট ৪। তৃতীয় বলটা ট্রটের ব্যাটের বাইরের কানায় লেগে জমা পড়ল উইকেটরক্ষক জহুরুল ইসলামের গ্লাভসে। আর তাতেই ইতিহাস। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেল প্রথম জয়। জয়টা ৫ রানের। এর আগে ৭৬ রানের ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন ইমরুল কায়েস।সংক্ষিপ্ত স্কোর :বাংলাদেশ: ২৩৬/৭ (ইমরুল ৭৬, জহুরুল ৪০, মাহমুদউল্লাহ ২৪*; শাহজাদ ৩/৪১, কলিংউড ১/১৬, ব্রড ১/৬০)।ইংল্যান্ড: ৪৯.৩ ওভারে ২৩১ (ট্রট ৯৪, স্ট্রাউস ৩৩, কিসওয়েটার ২০; শফিউল ২/৩৮, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৪২, রাজ্জাক ২/৪৩, রুবেল ২/৫২)।ফল : বাংলাদেশ ৫ রানে জয়ী।ম্যাচসেরা: মাশরাফি বিন মুর্তজা।১১ মার্চ ২০১১, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রাম :বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচ। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে জোনাথন ট্রট ও এউইন মরগানের ফিফটিতে ইংল্যান্ড শেষ ওভারে অলআউট হওয়ার আগে তুলল ২২৫ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই ২২৬। লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের শুরুটাও হলো দারুণ। তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস উপহার দিলেন ৫২ রানের উদ্বোধনী জুটি। টিম ব্রেসনানের বলে তামিম ফেরার সময় তার নামের পাশে ২৬ বলে ৩৮।এরপর দ্রুতই ফিরলেন জুনাইদ সিদ্দিক ও রকিবুল হাসান। বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেট ৭৩। চতুর্থ উইকেটে সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে ৮২ রানের জুটিতে দলকে টেনে নিয়েছিলেন ইমরুল। ৬০ রান করে ইমরুল রানআউটে কাটা পড়লে ভাঙে জুটি। আর এ জুটি ভাঙার পর পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ৭ রানের মধ্যে সাকিবসহ ফিরে যান মুশফিকুর রহিম, নাঈম ইসলাম ও আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ ৩ উইকেটে ১৫৫ থেকে দ্রুতই ৮ উইকেটে ১৬৯!তখনো ৬২ বলে বাংলাদেশের দরকার ৫৭। জয়টা যেন তখন হাজার আলোকবর্ষ দূরের পথ! সেখান থেকে নবম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী বোলার শফিউল ইসলাম। সেই বোলার শফিউলই বনে গেলেন ব্যাটসম্যান শফিউল। নিজের রানের খাতাই খুললেন ইংলিশ স্পিনার গ্রায়েম সোয়ানকে চার মেরে। এক বল পরেই ছক্কা। শফিউল-মাহমুদউল্লাহ মিলে সোয়ানের ওই ওভার থেকে তুললেন ১৬ রান। পরে এই দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটিই ৬ বল বাকি থাকতে বাংলাদেশকে এনে দিলেন দুর্দান্ত এক জয়। মাহমুদউল্লাহ উইনিং শটটি নিলেন ব্রেসনানকে চার মেরে। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ২১ রানে। আর শফিউল ২৪ বলে ৪ চার ও এক ছক্কায় অপরাজিত ২৪ রানে। সংক্ষিপ্ত স্কোর :ইংল্যান্ড : ৪৯.৪ ওভারে ২২৫ (ট্রট ৬৭, মরগান ৬৩, স্ট্রাউস ১৮; নাঈম ২/২৯, রাজ্জাক ২/৩২, সাকিব ২/৪৯)।বাংলাদেশ : ৪৯ ওভারে ২২৭/৮ (ইমরুল ৬০, তামিম ৩৮, সাকিব ৩২; শাহজাদ ৩/৪৩, সোয়ান ২/৪২, ব্রেসনান ১/৩৫)।ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : ইমরুল কায়েস।৯ মার্চ ২০১৫, অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড :চট্টগ্রামের ওই ম্যাচের পর ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড প্রথম দেখা। আবার বিশ্বকাপেই। আগের চারটি বিশ্বকাপেও খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানদের সেঞ্চুরি নেই। অ্যাডিলেডে আক্ষেপটা ঘোচালেন মাহমুদউল্লাহ। তার ব্যাটেই বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি দেখল বাংলাদেশ। তার ক্যারিয়ারেরও প্রথম। মাহমুদউল্লাহর ১০৩ রানের পাশাপাশি মুশফিকুর রহিমের ৮৯ রানের সুবাদে ইংল্যান্ডের সামনে বাংলাদেশ ছুড়ে দিল ২৭৬ রানের চ্যালেঞ্জ।সেই চ্যালেঞ্জে মোকাবিলা করতে নেমে মাশরাফি, তাসকিন, রুবেলের তোপে পড়ে ১৬৩ রানেই ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। পঞ্চম উইকেটে ক্রিস ওকসকে সঙ্গে নিয়ে ৭৫ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে আশা দেখাচ্ছিলেন জস বাটলার। তবে তাসকিনের বলে বাটলার মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরার পরের বলেই ভুল বোঝাবুঝিতে সাকিবের থ্রোয়ে রানআউট ক্রিস জর্ডান।শেষ ২৪ বলে ইংল্যান্ডের দরকার ৩৮ রান। তখনও ইংল্যান্ডের আশা জিইয়ে রেখেছিলেন ওকস ও স্টুয়ার্ট ব্রড। এক পর্যায়ে ইংল্যান্ডের ১৫ বলে প্রয়োজন ২০ রান। তখনই তাসকিনের বলে ওকসের ক্যাচ ফেলে দিলেন তামিম। ক্রিকেটে কথায় আছে, ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস! তবে কি জয় হাতছাড়া হয়ে যাবে বাংলাদেশের?না, জয় হাতছাড়া হতে দেননি রুবেল হোসেন। রুবেলের করা ইনিংসের ৪৯তম ওভারের প্রথম বলে বোল্ড ব্রড। তৃতীয় বলে বোল্ড শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ক্রিজে আসা জেমস অ্যান্ডারসনও। ১৫ রানের রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো নিশ্চিত করল বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। আর ইংল্যান্ড? বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে পড়ে বাড়ি ফেরার বিমানের টিকিট!সংক্ষিপ্ত স্কোর :বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ২৭৫/৭ (মাহমুদউল্লাহ ১০৩, মুশফিক ৮৯, সৌম্য ৪০; অ্যান্ডারসন ২/৪৫, জর্ডান ২/৫৯, মঈন ১/৪৪)।ইংল্যান্ড : ৪৮.৩ ওভারে ২৬০ (বাটলার ৬৫, বেল ৬৩, ওকস ৪২*; রুবেল ৪/৫৩, মাশরাফি ২/৪৮, তাসকিন ২/৫৯)।ফল : বাংলাদেশ ১৫ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা : মাহমুদউল্লাহ।