একাত্তরলাইভডেস্ক: কর দিতে মানুষকে উৎসাহিত করতে প্রতি বছর আয়কর মেলার আয়োজন করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১০ সালে দেশের মাত্র দুটি স্থানে প্রথম আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর একে একে সাতটি আয়কর মেলা আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়োজনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আয়কর মেলা ২০১০।সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলা যেমন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, তেমনি বেড়েছে মেলার পরিধি এবং সেবা ও আয়কর আদায়ের পরিমাণ। মাত্র দুটি স্থান থেকে আজ দেশের ১৫০টি জায়গায় আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে আয়কর আদায় ১১৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দাঁড়িয়েছে। বেড়েছে করসেবা, রিটার্ন দাখিল কিংবা নতুন কর শনাক্তকরণ নম্বর গ্রহণ পরিমাণ। এনবিআরের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ভবিষ্যতে দেশের প্রতিটি উপজেলায় কর মেলার কথা ভাবছে এনবিআর। মেলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক সময়ের করভীতি ধীরে ধীরে করপ্রীতিতে রূপ নিয়েছে। এখন আয়কর মেলা একটি উৎসবের নাম। করমেলার নাম সার্থক হয়েছে।এনবিআর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১০ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রামে আয়কর মেলা আয়োজনের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় আয়কর মেলা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মেলার পরিধি এবং সেবা ও আয়কর আদায়ের পরিমাণ। প্রথমবারের মেলা থেকে আয়কর আদায় হয়েছিল মাত্র ১১৩ কোটি টাকা। ওই মেলায় আয়কর রিটার্ন দাখিল হয় ৫২ হাজার ৫৪৪টি, নতুন টিআইএন নেয় ৫ হাজার ৬৩৮ জন করদাতা। মেলায় মোট সেবা গ্রহণ করে ৬০ হাজার ৫১২ জন করদাতা। এরপর ২০১১ সালে মেলার পরিধি একটু বাড়িয়ে দেশের বিভাগীয় শহরসহ আটটি স্থানে আয়কর মেলা আয়োজন করে এনবিআর। যে মেলা থেকে আয়কর আদায় হয় ৪১৪ কোটি টাকা। ওই মেলায় ৬২ হাজার ২৭২টি আয়কর রিটার্ন দাখিল করে করদাতা, নতুন টিআইএন নেয় ১০ হাজার ৪১ জন করদাতা। মেলায় মোট ৯৭ হাজার ৮৬৭ করদাতা সেবা নেয়। পরিধি আরো বাড়িয়ে ২০১২ সালে দেশের ১৮টি স্থানে আয়কর আয়োজন করে এনবিআর। যেখান থেকে আয়কর আদায় হয় ৮৩১ কোটি টাকা, রিটার্ন দাখিল হয় ৯৭ হাজার ৮৬৭টি, টিআইএন নেয় ১৬ হাজার ২৮৭ জন করদাতা ও ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৭ ব্যক্তি কর সেবা্ নেয়। ২০১৩ সালে দেশের ৬৪ জেলায় আয়কর মেলা আয়োজন করে এনবিআর। যেখানে প্রথম বারের মতো হাজার কোটি ছাড়িয়ে ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকা আয়কর আদায় হয়। এই মেলায় রিটার্ন দাখিল করে ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭ জন করদাতা। যেখানে প্রথমবারের মতো চালু হয় ১২ ডিজিটের ইলেক্ট্রনিক কর শনাক্তকারী নম্বর (ই-টিআইএন) নেওয়া। ৮৬ হাজার ৬৯৩ জন করদাতা এই নম্বর নেয় এবং করসেবা নেয় ৫ লাখ ১০ হাজার ১৪৫ জন করদাতা। ২০১৪ সালেও ৬৪ জেলায় আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সাত দিনব্যাপী ওই মেলায় ১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা কর আদায় হয়। যেখানে রিটার্ন দাখিল করে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩০৯ জন করদাতা। মেলায় ই-টিআইএন নেয় ২৬ হাজার ৭৪৫ জন করদাতা ও সেবা গ্রহণ করে ৬ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৫ জন ব্যক্তি। ২০১৫ সালে প্রথম বারের মতো আয়কর মেলার পরিধি জেলা থেকে উপজেলা পর্যায়ে ছড়িয়ে যায়। ৬৪ জেলার পাশাপাশি ৮৬ উপজেলাসহ ১৫০টি স্থানে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর ফল স্বরূপ দারুণ সাড়া পায় এনবিআর। ওই মেলা থেকে ২ হাজার ৩৫ কোটি টাকা আয়কর আদায় করে রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যেখানে রিটার্ন দাখিল হয় ১ লাখ ৬১ হাজার ৬০টি, ই-টিআইএন নেয় ১০ হাজার ৬১৯ জন করদাতা ও করসেবা গ্রহণ করেন ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৫৪ জন ব্যক্তি।সর্বশেষ সদ্য সমাপ্ত আয়কর মেলা ২০১৬ গত বছরের মতো ৬৪ জেলা ও ৮৬ উপজেলাসহ ১৫০ স্থানে অনুষ্ঠিত হয়। যেখান থেকে মোট ২ হাজার ১২৯ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮১১ টাকা আয়কর আদায় হয়। যা ২০১৫ সালের আয়কর মেলার চেয়ে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। প্রথমবারের মতো এনবিআরের নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত আয়কর মেলায় সাত দিনে মেলায় সেবা গ্রহণ করেছেন ৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭৩ জন, আয়কর রিটার্ন দাখিল করেছেন ১ লাখ ৯৪ হাজার ৫৯৮ জন ও নতুন ই-টিআইএন নিয়েছেন ৩৬ হাজার ৮৫৩ জন করদাতা। এবারে ‘সবাই মিলে দেব কর, দেশ হবে স্বনির্ভর’ স্লোগানে বিশাল পরিসরে আয়োজিত মেলায় বুথ ছিল মোট ১০৯টি। মেলায় প্রথমবারের মতো আয়কর ছাড়াও শুল্ক বিভাগ, ভ্যাট বিভাগ, শুল্ক ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনাল, কর আপীলাত ট্রাইব্যুনাল, বিএসএস (কর একাডেমি, বিএসএস (শুল্ক ও ভ্যাট) একাডেমি, সঞ্চয় অধিদপ্তর এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জন্য পৃথক বুথ ছিল।
জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আয়কর মেলা : বেড়েছে সেবা ও আদায়ের পরিমাণ
November 8, 2016