আড়াই বছরের সন্তানকে ফিরে পেতে মায়ের সংবাদ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি: ‘আমার সন্তানকে ফিরিয়ে দিন। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রের সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তারা যেনো আমার বাচ্চাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে।’  দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই কেদে আকুতি জানান আড়াই বছরের শিশু হুমাইয়ারা আলভীর মা ও যৌতুকের জন্য স্বামীর হাতে নির্যাতিতা ফয়জুন্নেসা মিথিলা।
মিথিলাসহ পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে এবং সন্তানকে ফিরে পেতে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলো মিথিলার বাবা মজনু বিল্লাহ, মা মলি বেগম, চাচা এম এ মিন্টু।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মিথিলা জানান, ২০১২ সালের ২৩ মার্চ স্বামী হুসাইন মজুমদারের সাথে পরিবারের অমতে বিয়ে হয়। কিন্তু পরবর্তীতে পরিবার বিয়ে মেনে নেয় এবং জাকজমকপূর্ণ ভাবে তাদের তুলে দেয়। দু-বছর ভালো চললেও ২০১৪ সাল থেকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে স্বামী। ঐ বছর বাবা মা তার স্বামীকে ব্যাবসা করার জন্য মোট চার লাখ টাকা দেয় । এরপর আবারো খালা-খালুর কাছ থেকে সাড়ে চার লাখ টাকা এনে দেয়। এরই মধ্যে মেয়ে আলভী জন্ম নেয়। এরপর থেকেই দেবর জসিম, ভাসুর আজমসহ তার স্বামী আরো টাকা চেয়ে চাপ দিতে থাকে।

পরবর্তিতে স্বামী হুসাইন মজুমদার আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতো ও শারিরিকভাবে নির্যাতন করতো। কিন্তু কিছুদিন পর গাড়ি কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা চেয়ে না পেয়ে স্বামীর সাথে সাথে ভাসুর, দেবরসহ সকলে অমানুষিক নির্যাতন চালায় মিথিলার উপর। ২০১৬ সালের ৭ অক্টোবর বাড়ির সকলে মিলে আমার শিশু সন্তান আলভীকে রেখে আমাকে এক বস্ত্রে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বলে ৫ লাখ টাকা না আনলে বাড়ির দরজা বন্ধ। এরপর সন্তানকে পেতে বিভিন্ন জায়গায় সাহায্য চাই। ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর মাতুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন এর কাছে যাই। তিনি আলভীকে উদ্ধার করে দিকে পারেননি। এরপর কদমতলী থানায় বাচ্চা উদ্ধারে জন্য জিডি করেন মিথিলা ।

ওসি এসআই শওকতকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়। এসআই মীমাংসার জন্য থানায় বসেন। কিন্তু সেখানে এসআই এর সামনেই টাকা না দিলে পরিস্থিতি ভয়ংকর হবে বলে হুমকি দেয় তার স্বামী। মীমাংসা না হওয়ায় ঐ বছর ১৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলা দায়ের করি। আদালতের মাধ্যমে কদমতলী থানা সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়েও বাচ্চা উদ্ধার করতে পারেনি।

এরপরও স্বামীকে বাচ্চা নিয়ে হাজির হতে ২ টি তারিখ দেয়া হয়। না আসায় এবছর ১৬ এপ্রিল সিআইডিকে বাচ্চা উদ্ধার করে ১৫ মে আদালতে থাকার কথা বলা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত শিশু আলভীকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এর আগে র‌্যাব-১০ কে দরখাস্তের মাধ্যমে জানিয়েছি। তারা কোন ব্যবস্থা নেয় নি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন ঢাকা বরাবর এবছর ১৪ এপ্রিল জানিয়েছি। ডি.সি এসপির কাছে ১৫ মে দরখাস্ত দিয়েছি। এতো কিছু করে আমার সন্তানকে না পেয়ে দিশেহারা। উল্টো আমার বাবা, চাচা, ও আমাকে নারী পাচারের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত নারায়ণগঞ্জ লিগ্যাল এইড সম্পাদক শাহানারা বেগম বলেন, পুলিশ কেনো এখনো বাচ্চাটিকে উদ্ধার করতে পারলো না সেটা খুজে বের করতে হবে। আইনত মায়ের কাছে থাকার কথা থাকলেও পুলিশ মায়ের কাছে তার শিশুকে এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছে।নারী সংহতির জেলা সম্পাদক পপি রাণী সরকার বলেন, বাংলাদেশের প্রশাসন অনেক বড় বড় অপরাধিকেই ধরে। কিন্তু কেনো পুলিশ পারলো না, সিআইডি কেনো পারছেনা সেটা স্পষ্টত প্রশ্ন সৃষ্টি করে। অতিদ্রুত আমরা মায়ের কোলে শিশুটিকে দেখতে চাই।