ক্রীড়া প্রতিবেদক : প্রথমে ব্যাট করে ব্যাটসম্যানরা এনে দিয়েছিলেন ৩০৫ রানের পুঁজি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেটা ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম বারের মতো ৩০০ পেরোনোর ঘটনাও। কিন্তু সেই পুঁজিও যথেষ্ট প্রমাণ করতে পারলেন না বোলাররা। জয় দূরের কথা, বিশাল এই পুঁজি নিয়েও ওভালে বাংলাদেশী বোলাররা ইংলিশদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলেন না! বিশাল এই লক্ষ্য তাড়ায় ইংলিশরা হারালো মাত্র দুটি উইকেট। তার একটি শুরুতেই তুলে নিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। অন্য উইকেটটি নিয়েছেন অকেশনাল বোলার সাব্বির রহমান। তবে সেটা ম্যাচের মুঠো আলগা হয়ে যাওয়ার পর। তারপরও তো সুযোগ ছিল। কিন্তু মোস্তাফিজ, রুবেল, সাকিবরা মিলেও নিতে পারলেন না একটা উইকেট। ফল, ২ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ৪৭.২ ওভারেই পৌঁছে যায় লক্ষ্যে (৩০৮/২)। যার অর্থ, নিজেদের ঘরের মাটির চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শুরুটা ইংলিশরা করল ৮ উইকেটের অনায়াস জয়ে।
২.৪ ওভার বাকি থাকতেই ৮ উইকেটের জয়, অনায়াস না তো কী! অথচ বাংলাদেশ ইনিংস শেষে জয়ের স্বপ্নটাই দেখতে শুরু করেছিল দেশবাসী। ইংলিশদের বিপক্ষে প্রথম বারের মতো ৩০০ পেরোনো স্কোর গড়ার পর জয় স্বপ্ন তো দেখাই যায়। কিন্তু সেই জয় স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে বোলাররা যে এক যুগে এমন নিষ্প্রভ থাকবেন, সেটা কে জানত! সীমিং কন্ডিশনেও রুবেল-মোস্তাফিজরা কোনো উইকেট পাবেন না, সেটা ইনিংসের শুরুতে বিশ্বাস করাই কঠিন ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাই বাস্তবতা।
৩০৬ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংলিশ শিবিরে শুরুতেই আঘাত হেনেছিলেন মাশরাফি। মাত্র ১ রানেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন জেসন রয়কে। কিন্তু বাংলাদেশের শুরুর সেই উইকেট প্রাপ্তির আনন্দকে ওভালের পিচের নিচে চাপা দিয়ে অ্যালেক্স হেলস ও জো রুট দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ১৫৯ রানের জুটি। এই জুটিতেই মূলত বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে যায় ম্যাচ। তবে তারপরও একটা সুযোগ ছিল। শেষ দিকে বোলাররা জ্বলে উঠতে পারলে জয় তখনো অসম্ভব ছিল না। কারণ জয়ের জন্য ইংলিশদের তখনো দরকার ছিল ১৩১ রান। ওভার ছিল ২২টি। কিন্তু বাংলাদেশ নিতে পারলো না আর একটা উইকেটও।
ও হ্যাঁ, মাশরাফির বলেই মরগানের একটা ক্যাচ নিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। মরগান তখন ৯ রানে দাঁড়িয়ে। ক্যাচটা হলে ভালোভাবেই ম্যাচে ফিরতে পারত বাংলাদেশ। কিন্তু আম্পায়ার মরগানকে থামিয়ে ক্যাচটির বৈধতা পরীক্ষা করতে ইঙ্গিত করলেন টিভি আম্পায়ারকে। রিপ্লে দেখে টিভি আম্পায়ার জানিয়ে দিলেন, তামিম ক্যাচটি হাতে জমানোর আগে বল মাটি স্পর্শ করেছে। সুতরাং মরগান নট আউট! আম্পায়ারের সেই সিদ্ধান্ত খুব ভালো মনে মেনে নেননি তামিম। তার প্রতিবাদও তিনি করেছেন। কিন্তু তাতে ইংলিশদের বয়েই গেছে!
৯ রানে ভাগ্য গুণে বেঁচে যাওয়া সেই মরগান খেলেছেন অপরাগিত ৭৫ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি করা জো রুটের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে গড়েছেন ১৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। রুটকে সঙ্গী করে মাঠ ছেড়েছেন জয়ের হাসি হাসতে হাসতে। হেলস ৯৫ রানে ফিরে গেলেও রুট ঠিকই তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দশম এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত ছিলেন ১৩৩ রানে। ১ ছক্কা ১১ চারে ১২৯ বলে তার সেই ইনিংস তাকে এনে দিয়েছে ম্যাচসেরার পুরস্কারও। তাতে ভেস্তে গেছে বাংলাদেশ ওপেনার তামিমের ১২৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংসটি।
এর আগে টস জিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচটিতে বাংলাদেশকে প্রথম ব্যাটিংয়ে পাঠান ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ও মুশফিকুর রহীমের ৭৯ রানের ইনিংসে চড়ে বাংলাদেশ গড়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সর্বোচ্চ রানের পুঁজি। ক্যারিয়ারের ৯ম ও ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি করা তামিম খেলেছেন ১৪২ বলে ১২৮ রানের ইনিংস। যে ইনিংসটিতে ছিল ৩টি ছক্কার সঙ্গে ১২টি চারের মার। মুশফিকের ৭২ বলের ইনিংসে চারের মার ছিল ৮টি।
তামিম-মুশফিক মিলে তৃতীয় উইকেটে গড়েন ১৬৬ রানের জুটি। যেটা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পার্টনারশিপ। তবে রেকর্ড পার্টনারশিপ গড়ার পর দুজনে আউট হন যুগপত। পরপর তারা আউট না হলে দলের সংগ্রহটা আরও বাড়তে পারতো। তবে যা করেছিল সেটাও কম না। কিন্তু বোলাররা যে করতে পারলেন না কিছুই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৫০ ওভারে ৩০৫/৬ (তামিম ১২৮, সৌম্য ২৮, ইমরুল ১৯, মুশফিক ৭৯, সাকিব ১০, সাব্বির ২৪, মাহমুদউল্লাহ ৬*, মোসাদ্দেক ২*; প্লানকেট ৫৯/৪, স্টোকস ৪২/১, জ্যাক বল ৮২/১, ক্রিস ওকস ৪/০, জো রুট ১৮/০, মঈন আলি ৪০/০, উড ৫৮/০)।
ইংল্যান্ড : ৪৭.২ ওভারে ৩০৮/২ (রয় ১, হেলস ৯৫, রুট ১১৩*, মরগান ৭৫*;সাব্বির ১৩/১, মাশরাফি ৫৬/১,সৌম্য ১৩/০, মোস্তাফিজ ৫১/০,সাকিব ৬২/০, রুবেল ৬৪/০)।
ফল : ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : জো রুট (ইংল্যান্ড)