আমাদের অর্থ দিয়ে তারা মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছিল : প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক : পাট-চা-তামাক বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতাম আমরা আর ভোগ করত পাকিস্তানিরা বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পাট-চা-তামাক বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতাম। সব নিয়ে যেত পাকিস্তানিরা। পাকিস্তান রাজধানী পরিবর্তন করেছে বারবার। একটা ছিল করাচি, এরপর ইসলামাবাদ এরপর পিন্ডি। যতবার রাজধানী পরিবর্তন হয়েছে তার অর্থ আমাদের কাছ থেকে নিয়েছে। টাকা দিতে হতো আমাদের আর ভোগ করত তারা।

পাকিস্তানিদের দ্বারা বাঙালিদের শোষণ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের অর্থ দিয়ে তারা মরুভূমিতে ফুল ফুটিয়েছিল, আর আমাদের মরুভূমিতে পরিণত করতে চেয়েছিল। এর বিরুদ্ধেই ছিল বঙ্গবন্ধুর সংগ্রাম।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে কাজ করেছেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১২৬টি দেশ থেকে স্বীকৃতি এনেছেন। প্রত্যেকটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এক কোটি শরণার্থী দেশে ফেরত এসেছিল। তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু।

বাঙালিরা পাকিস্তানিদের চেয়ে এগিয়ে ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের চিন্তা-চেতনা, খাদ্যাভ্যাস কোনও কিছুতেই পাকিস্তানিদের সঙ্গে আমাদের কোনও মিল ছিল না। শিক্ষা-দীক্ষা-সংস্কৃতি সবদিক থেকে আমরা উন্নত ছিলাম। সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর সংখ্যালঘিষ্ঠের বৈষম্য-শোষণ-নির্যাতনের সময় ছিল সেটি।

এমনকি দেশভাগের (১৯৪৭ সালে) পর ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা করতে বাঙালিরাই এগিয়ে গিয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ভারতের হাত থেকে পাকিস্তানকে রক্ষা বাঙালিরাই করেছে। পাকিস্তানের উঁচু-লম্বা সৈন্যরা কিন্তু এগিয়ে যায়নি, বাঙালি রেজিমেন্টই এগিয়ে গিয়েছিল। ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে বাঙালি ছাড়া রক্ষা হতো না। এরপর ১৯৬৬ সালে জাতির পিতা ছয় দফা দিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকারদের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘দুই মাস পর পর আমাদের ঋতু বদলায়, সবই বদলায়। যার ফলে আমরা খুব বিস্মৃতিপরায়ণ। না হলে যে পাকিস্তানিরা বাঙালিকে অত্যাচার করেছে, স্বাধীনতার সময় কীভাবে একটা অংশ সেই পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করলো।’

স্বাধীনতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং মিত্রবাহিনীর সহযোগিতায় ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য আত্মসমর্পণ করে।

তিনি বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর মিত্রবাহিনীকেও দেশে ফেরত পাঠান। এটা সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো একজন স্বাধীনচেতা নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন নেতা ছিলেন বলে। বিশ্বের কোনও দেশে মিত্রবাহিনী যুদ্ধের পর ফেরত যায়নি, শুধু বাংলাদেশেই এটা সম্ভব হয়েছে।

আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য বারবার চেষ্টা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কেউ আওয়ামী লীগকে শেষ করতে পারেনি। কারণ এই আওয়ামী লীগের শেকড় বাংলার জনগণের হৃদয়ে প্রোথিত।