অনলাইন ডেস্ক: চিত্রশিল্পী নাদিরা আক্তার ইংল্যান্ডের এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় তার কিছু ছবি পাঠিয়েছিলেন। কিভাবে যেন টের পেয়ে আন্তর্জাতিক প্রতারকচক্র পিছু নেয় তার। একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে কিছু তথ্য নেয়। এরই মধ্যে এক ব্যক্তি নাদিরাকে ফোন করে নিজেকে ইংল্যান্ডের ওই প্রতিযোগিতার কর্মকর্তা বলে পরিচয় দেয়। লোকটি বলে, প্রতিযোগিতার জন্য পাঠানো ছবি পুরস্কার পেয়েছে। তাই তিন লাখ পাউন্ড ও মূল্যবান উপহারসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে।
কয়েক দিন পর চক্রের সদস্য শামীমা রহমান নামে বাংলাদেশের একজন নাদিরা আক্তারকে ফোন দিয়ে বলে, ‘আমি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বলছি। আপনার নামে তিন লাখ পাউন্ডের পার্সেল এসেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পার্সেলটি স্ক্যান করে পাউন্ড দেখে আটকে দিয়েছে। ছাড়িয়ে নিতে অনেক টাকা লাগবে।’ এরই মধ্যে থমাস কিং নামে চক্রের আরেকজন সদস্য নাদিরাকে ফোন করে পার্সেলটি যেকোনোভাবে ছাড়িয়ে নিতে বলে। থমাস যুক্তি দেখায়, পার্সেলে প্রায় তিন কোটি টাকা দামের উপহার রয়েছে। ওদিকে শামীমা ভয় দেখায়, কিছু না করলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করবে। তাদের কথা বিশ্বাস করে পার্সেল ডেলিভারি নেওয়ার জন্য প্রতারকদের দেওয়া দুটি ব্যাংক হিসাব নম্বরে দুই দফায় ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা পাঠান নাদিরা। তার পরও পার্সেল আসছে না দেখে যোগাযোগ করলে প্রতারকরা আরো টাকা চায়। প্রলুব্ধ নাদিরা চক্রের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে থাকেন। এভাবে এক কোটি এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা দেওয়ার পরও যখন পার্সেল আসছিল না, তখন নাদিরা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অবশেষে তিনি বনানী থানায় মামলা করেন।
পরে ওই মামলার দায়িত্ব নিয়ে সিআইডি তদন্ত শুরু করে। এরপর গত শুক্রবার বারিধারা ও খিলক্ষেত লেকসিটি এলাকা থেকে প্রতারণায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই বাংলাদেশিসহ পাঁচ নাইজেরিয়ানকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্লা নজরুল ইসলাম।সোমবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আটক পাঁচ নাইজেরিয়ানের নাম ওগোখোয়া ওনোচি (৩২), হ্যানরি ওরফে শর্ট হ্যানরি (২৪), মরিস (৩৪), ওবিনা (৩৫), এন্থনি কেজিতো অ্যারেঞ্জি (২৬)। আটক হওয়া দুই বাংলাদেশির নাম কাউসার আহমেদ ও রাইসুল ইসলাম আসাদ। মোল্লা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ নাইজেরিয়ান দাবি করেছে তারা ফুটবলার, একসময় ফেনী ফুটবল ক্লাবে খেলেছে। পরে তাদের দুজন মোহামেডান ক্লাবে খেলেছে। দুজনের একজন পরে আবাহনীতেও খেলেছে বলে তারা সিআইডির কাছে দাবি করেছে। তাদের প্রত্যেকের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে বলে জানান সিআইডির এই কর্মকর্তা।