নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে একদল বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে তিনি শহীদ হন।
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার নিভৃত পল্লী বাগবাড়ির এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব ও কৈশোরে তিনি কমল নামে পরিচিত ছিলেন। তার পিতা মনসুর রহমান সরকারি চাকরির জন্য প্রথমে কলকাতায় ও ’৪৭ সালে দেশ ভাগের পর চলে যান করাচি শহরে অবস্থান করায় সেখানেই তার লেখাপড়া। শিক্ষাজীবন শেষ করে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমী কাকুলে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি কমিশন লাভ করেন। পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসাবে খেমকারান সেক্টরে অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ পরিচালনা করেন।
জিয়াউর রহমান ইস্ট বাংলা রেজিমেন্ট- ইপিআরের বাঙালি পল্টুনের মেজর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য অবদানের জন্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান ছিলেন। জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রথমে জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) এবং পরবর্তিতে ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি গঠন করেন। তার দল বিএনপি বর্তমানে এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।বর্তমানে তার সহধর্মিণী বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন এবং তার বড় ছেলে তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান।
স্বাধীনতা যুদ্ধে তার ছিল উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। রাষ্ট্রপতি জিয়া খালকাটা কর্মসূচি, সবুজ বিপ্লব, শিল্প উন্নয়ন এবং যুগোপযোগী ও আধুনিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রাখেন। নারী সমাজের উন্নয়ন ও শিশুদের বিকাশে তার আগ্রহ জাতিকে নতুন দিকনির্দেশনা দেয়। তার সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও দেশপ্রেম ছিল অতুলনীয়।। মুসলিম বিশ্বে, জোটনিরপেক্ষ বলয়ে ও পাশ্চাত্যে তেজোদীপ্ত ও প্রজ্ঞাবান রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ভূমিকা পালনে, সার্কের সফল স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে শহীদ জিয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিম লে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের অগ্রভাগে এনে দিয়েছিলেন। জিয়ার ঈর্ষণীয় এই জনপ্রিয়তা ও দেশপ্রেমই তার জন্য কাল হয়েছিল।
বহুদলীয় রাজনীতি চালু করে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে তিনি দেশের মানুষকে সুসংগঠিত করেন। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের এক নিবিড় যোগসূত্র স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি জিয়া।
দেশকে যখন তিনি সামনের দিকে নিয়ে চলেছেন সেই সময়ে তার বিরুদ্ধে শুরু হয় দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। ১৯৮১ সালের ২৯ মে তিনি এক সরকারি সফরে চট্টগ্রামে যান। ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে গভীর রাতে একদল সেনাসদস্য তাকে হত্যা করে। বিপথগামী সেনা সদস্যরা তার লাশ চট্টগ্রামের রাউজানের গভীর জঙ্গলে কবর দেয়। তিনদিন পর ওই লাশ উদ্ধার করে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এনে দাফন করা হয়।
কর্মসূচি: আজ সকাল ৬টায় নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন, একইভাবে সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে একই কর্মসূচি পালন করা হবে। সকাল ১০টায় জিয়াউর রহমানের শেরেবাংলা নগরস্থ মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ওলামা দলের উদ্যোগে মাজারে ফাতেহা পাঠ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।