আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতাঃ ধর্ম যার যার উৎসব সবার। এ মতবাদকে ধারন করে সনাতন ধর্মের অনুসারিসহ অন্যান্য ধর্মের লোকদেরও ব্যাপক আগ্রহ আর উচ্ছসিত এর মধ্য দিয়ে অন্যান্য বছরের মত এবারও বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূজা মন্ডপ তৈরি হয়েছে আগৈলঝাড়া উপজেলায়। শরতের কাশ ফুলের সাদা শুভ্রতা মনে করিয়ে দেয় বিপদ নাশিনী দেবী দূর্গার আগমনী বার্তা। আর সেই শারদীয় উৎসবের অন্যতম দূর্গা পূঁজার প্রতিমা রং করতে এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রতিমা তৈরির শিল্পীরা। পুঁজা মন্ডপগুলোয় শেষ প্রস্তুতির কাজও চলছে পুরোদমে। শুরু হয়েছে চোখ ধাঁধানো পুঁজা মন্ডপ, ম তৈরি ও দর্শনার্থীদের আকর্ষণের জন্য নানা পরিকল্পনার কাজ। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে উৎসব চলাকালীন সময়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়েছে। বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বেশী পূঁজা অনুষ্ঠিত হয় আগৈলঝাড়ায়। তাই প্রতিমা বানাতে ও রং করতে এখানকার মৃৎশিল্পীদের চোখে এখন ঘুম নেই। বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় তাদের এই শরৎকাল। অধিকাংশ মন্ডপে প্রতিমার গায়ে মাটির শেষ প্রলেপ দেয়া শেষ হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই শেষ হবে রং-তুলির শেষ আচড়। পঞ্জিকা মতে ৭ অক্টোবর দেবীর ঘোটকে আগমন থেকে পূঁজা শুরু হয়ে ১২ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে দোলায় গমনের মধ্য দিয়ে ৫ দিনের পূজার সমাপ্তি হবে। উপজেলার উত্তর শিহিপাশা গ্রামের পাল পাড়ার প্রতিমা শিল্পীরা আগৈলঝাড়াসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও প্রতিমা নির্মানে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ১শ ৪২টি পূজা মন্ডপে শারদীয় দূর্গা পূঁজা অনুষ্ঠিত হবে। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্তের গৈলা গ্রামের দাসের বাড়িতে দূর্গা প্রতিমায় রং করার সময় কথা হয় প্রতিমা শিল্পী শিহিপাশা গ্রামের জয়দেব পাল ও তার ছেলে সঞ্জয় পালের সাথে। তারা জানান, আগৈলঝাড়ার শিল্পীদের নির্মিত বিভিন্ন ধরনের প্রতিমা সৃদুশ্য হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় তাদের প্রতিমার চাহিদা রয়েছে। এবার তারা ২৫টি প্রতিমা তৈরীর অর্ডার পেয়েছেন। সঞ্জয়ের কাকা একই বাড়ির শিবু পাল পেয়েছেন ১৮ টি ও মহাদেব পাল পেয়েছেন ১৪টি প্রতিমা তৈরীর অর্ডার। প্রতিমা নির্মানে বিভিন্ন সাইজের জন্য তারা সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা নিচ্ছেন। কয়েক ধরনের প্রতিমা তৈরি করেন বলে জানান তারা। প্রথমে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ফ্রেম বানিয়ে খর-কুটা আর বাঁশ দিয়ে একটি কাঠামো দাঁড় করানো হয়। তার উপরে মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রতিমার আকার দাড় করানো হয়। এরপর দেয়া বিশেষ ধরনের মাটির প্রলেপ। ওই প্রলেপ শুকানোর পর শুরু হয় রং এর কাজ। মুলত ষষ্ঠী পূঁজার মধ্যদিয়ে মন্ডপগুলোতে শুরু হয় দেবীর আরাধনা ও পূঁজা। এর আগেই রং ও অলংকারের কাজ শেষ করে প্রতিমাগুলো পূঁজার জন্য প্রস্তুত করা হয়। এরপর মন্ডপে চলে আলোকসজ্জার কাজ। তারা আরও জানান, সারা বছরই চলে বিভিন্ন প্রতিমা তৈরির কাজ। শুধু দূর্গা প্রতিমাই নয় এখানে কালি, লক্ষèী, বিশ্বকর্মা, সরস্বতী, বাসন্তিসহ সব পুজার প্রতিমাই তৈরি করা হয়। এসব প্রতিমা অর্ডার নিয়ে ও বাড়িতে তৈরী করে বিক্রি করা হয়। আগৈলঝাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘পূজায় নিরাপত্তা দেয়া, বিশৃংখলা ও নাশকতা রোধে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরী করতে পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি আনসার ও সাদা পোষাকধারী পুলিশ নিয়োজিত থাকবে। উল্লেখ্য, আগামী ৭ সেপ্টেম্বর দেবীর অধিবাসের মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের ৫ দিন ব্যাপী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
আগৈলঝাড়ায় ১শত ৪২টি প্রতিমা রং করতে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কুমারশিল্পীরা

September 30, 2016