আগৈলঝাড়ায় বাল্য বিয়ের আসর থেকে বর ও কনের বাবাসহ আটক ৪

আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সংবাদদাতা ঃ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ইউপি সদস্যর উপস্থিতিতে বাল্য বিয়ের আসর থেকে বিজিবি সদস্য বর ও কনের বাবাসহ চার জনকে আটক করেছে পুলিশ। বহু নাটকীয়তা শেষে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশের ধরা আর ছাড়ার কারনেই বন্ধ হচ্ছেনা উপজেলার বাল্য বিয়ে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলার বাকাল ইউয়িনের পশ্চিম পয়সা গ্রামের কাচামাল ব্যবসায়ি বক্কার সিকদারের মেয়ে ও পয়সা স্কুল এ্যান্ড কলেজের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী সুইটি আক্তারের সাথে পাশ্ববর্তি কোটালীপাড়া উপজেলার হরিনাহাটি গ্রামের মৃত ফয়জর আলী গাজীর ছেলে আল আমিনের সাথে স্থানীয় ইউপি সদস্য সোবহান মিয়ার উপস্থিতিতে শুক্রবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বর আল আমিন রাঙ্গামাটিতে বিজিবি সদস্য হিসেবে কর্মরত। কনের চাচা নেছার উদ্দিন জানান, তারা আগে থেকে বিয়ের কিছুই জানতেন না। কনের বয়স না হওয়ায় ওই বিয়ে পড়াতে বাকাল ইউনিয়নের নিয়োগকৃত কাজী মনির হোসেন অস্বীকৃতি জানালে কোটালীপাড়া উপজেলার বান্ধাবাড়ি ইউনিয়নের কাজী মাওলানা ছামাদ মিয়া কনের বয়স বেশি দেখিয়ে দুই তিন-দিন আগে এই বাল্য বিয়ে কাবিন করেন। শুক্রবার শরিয়া মোতাবেক ওই বাল্য বিয়ে পড়ান পয়সা মসজিদের পেশ ইমাম মাসুম বক্তিয়ার। বাল্য বিয়ের খবরে এএসআই শাহ আলম একজন ফোর্স নিয়ে সেখানে হাজির হন। পরে সেখানে আরও দুই সাব ইন্সপেক্টর হাজির হন। বরযাত্রীসহ দাওয়াতী মেহমানদের খাওয়া-দাওয়া শেষে বিয়ের আসর থেকে বিজিবি সদস্য বর আল আমিন, তার চাচা, কনের বাবা বক্কার সিকদারকে ও চাচাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। বাকাল ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য সোবহান মিয়া ও এএসআই শাহ আলমের মধ্যস্ততায় বাল্য বিয়ের অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে বরের সাজা হলে চাকুরী চলে যাবে! এমন ভয় দেখিয়ে বহু নাটকীয়তা শেষে কোন আইনী ব্যবস্থা না নিয়ে শুক্রবার রাতেই মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আটককৃতদের ছেড়ে দেন ওসি মো. মনিরুল ইসলাম। প্রশাসন আগৈলঝাড়া উপজেলাকে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা করলেও পুলিশের হেন ভূমিকার কারণে কোন ভাবেই বাল্য বিয়ে রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এব্যাপারে ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিয়ে হয়নি। বিয়ে আগে হয়েছে। ওই দিন ছেলে মেয়ের বাড়ি বেড়াতে এসেছিল। অভিযুক্তদের আটক করে থানায় আনার পর নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোনে জানানো হয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তা শুক্রবারসহ ছুটির দিন ও রাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকায় কোর্ট করবেন না বলে তাকে জানান। অর্থ বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে আরও বলেন, পরে বিষয়টি এএসপি সার্কেলের সাথে কথা বলে মুচলেকা রেখে আটককৃতদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হয়েছে কিনা জানতে চাইলে, ওসি জানান তিনি ষ্টেশনে আছেন তা তিনি জানতেন না। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শতরূপা তালুকদার বলেন, “অফিস সময়ের পরে এবং রাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার এখতিয়ার তার নেই। এ ক্ষেত্রে আইনের সংশোধন করতে হবে”। তিনি আরও বলেন, “কোন বিষয় পুলিশের এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। মোবাইল কোর্ট না হলেও ওসি যে কোন বিষয়ে প্রচলিত আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন”।