এস এম শামীম, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) থেকেঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পানের বরজ এর জন্য বাঁশের বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী এখন অনেক পরিবার। যারা এক সময় অন্যের বাড়ী বা জমিতে কাজ করে কোন রকমে সংসার চালাতো, তারা আজ পানের বরজ এর জন্য বাঁশ দিয়ে তৈরি খুঁটি,শলা (চেরা), হাবডা, গাছ চেরা তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়ে নিজের পায়ে দাড়িয়ে আজ লক্ষ টাকার স্বপ্ন দেখছেন আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের যবসেন গ্রামের অনেক পরিবার। পানের বরজের জন্য বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে বিক্রি করে তারা আজ কেউ নিজের সন্তানকে স্কুল-কলেজ কেউবা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করছেন আবার সংসারের অবকাঠামোগত উন্নয়নেও অবদান রেখে চলছেন এসব দরিদ্র পরিবারের লোকজন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামে পুড়োনো ডাকবাংলো সংলগ্ন খালের পাশে জায়গা ভাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে কোন রকমে একটু ছাপরা দিয়ে তারা দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে তৈরি করে যাচ্ছে পানের বরজের জন্য বাঁশ দিয়ে বিভিন্ন উপকরণ।
পানের বরজের এসব উপকরণ তৈরির জন্য বিভিন্ন প্রকার বাঁশ রাজবাড়ী, মাদারীপুর, শিরচরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয়, যার মধ্যে তল্লা বাঁশ, বন বাঁশ, বড়া বাঁশ উল্লেখযোগ্য। পানের বরজের জন্য বাঁশ দিয়ে খুঁটি, শলা (চেরা), হাবডা, গাছ চেরা তৈরি করার পর এ অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মহাজন বা পানের বরজের মালিকরা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যায়।
এ কাজের সাথে জড়িত মোঃ বারেক পাইক বলেন, আমি প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ বছর যাবৎ এ পেশার সাথে জড়িত আছি। আমার বাবা’র কাছ থেকেই আমি এসব তৈরি করা শিখেছি। এ কাজ করে আজ আমি আর্থিকভাবে সাবলম্বী। অল্প পুঁজি নিয়ে আমরা ব্যবসা শুরু করেছি। তবে আমরা যারা এ পেশার সাথে জড়িত আছি তাদের জন্য সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যাবস্থা করত তাহলে আমরা আরো অধীক উন্নতি সাধন করতে পারতাম।
এ কাজের সাথে জড়িত আর একজন হলো একই গ্রামের শাহ্ জালাল ফরিয়া। তিনি বলেন, আমরা বছরের ১২ মাস এ কাজ করে থাকি। বাঁশ কিনে আনার পর সেগুলোকে আমরা ১৫-২০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখি। এর পর এগুলো ভালভাবে ধুয়ে পরিস্কার করে হালকা শুকিয়ে সুন্দর করে চেছে পানের বরজের জন্য খুঁটি, শলা (চেরা), হাবডা, গাছ চেরা তৈরি করি। এগুলো নতুন পানের বরজ তৈরি করতে এবং ও পুরনো পানের বরজ সংস্কারের জন্য এসব প্রয়োজন হয়।
এ কাজের সাথে জড়িত মোঃ এচাহাক ফরিয়ার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, সেই ছোটবেলা থেকে এ পেশার সাথে জড়িত আছি। কিন্তু দিন দিন পানের বরজ ধংস করে বিভিন্ন মানুষ বসবাসের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরি করছে, যে কারনে দিন দিন অনেকে এ পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে। এছারাও মহাজনরা অধিক লাভের আশায় বাজারে ভারতের পান আমদানি করায় অনেকেই পানের বরজ তুলে দিচ্ছে। যে কারনে আমাদের আগের চেয়ে বেঁচা-বিক্রি কম। তবে কিছু কিছু তরুণ উদ্যোক্তা নতুন করে পানের বরজ তৈরি করছে।
কথা হয় এ কাজের সাথে জড়িত মোঃ জিয়ারুল পাইক এর সাথে। তিনি তখনও বাঁশ চাছার কাজে ব্যাস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের বাঁশ দ্বারা পানের বরজের জন্য তৈরি করা শলা (চেরা) গুলো ১৬০ টি করে একটি আটি বাধি। এ রকম ৮ টি আটি মিলিত করি যাকে বলে কাউন। এই এক এক কাউন ২ হজার থেকে ২২ শত টাকা বিক্রি করি তাতে আমাদের সমন্ত খরচ বাদ দিয়ে ৫-৭ শত টাকা লাভ হয়।
এই গ্রামের আরো যারা পানের বরজের জন্য বাঁশের তৈরি বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তাদের সাথে কথা বলেও অনুরুপ অভিব্যাক্তি পাওয়া যায়।
এদের মধ্যে মাছুম ফরিয়া, আল-আমিন ফরিয়াসহ আরো অনেকে এ পেশার সাথে জড়িত রয়েছে। তারাও এ কাজ করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা পেয়েছেন বলে জানান তারা। তারা বলেন, অন্য পেশায় বছরে ৬ মাস কাজ থাকে, আর এ পেশায় আমরা বছরে ১২ মাস কাজ করে থাকি। সরকারী উদ্যোগ, সহযোগীতা, ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ঋণ ও এনজিও সংস্থার সার্বিক সহযোগীতা পেলে এ পেশায় উৎসাহী ব্যক্তি বা পরিবার আর্থিকভাবে স্বাবলম্বীর পাশাপাশি সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে বলে বিজ্ঞবানদের অভিমত। তাইতো সরকারী সহযোগীতা পাওয়ার জোড় দাবী ছোট-বড় এ পেশার সাথে জড়িত সকলের ।