আগৈলঝাড়ায় কচুরিপানার কাগজে তৈরি হচ্ছে বড়দিনের উপহার

এস এম শামীম, আগৈলঝাড়া (বরিশাল):

২৫ ডিসেম্বর রবিবার শুভ বড়দিন। বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় বড়দিনের সান্তা ক্লজ, ট্রি সাজানোর নানাপন্য সামগ্রী, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহারসহ কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরিকৃত খেলনা সামগ্রী বিদেশে রপ্তানি করে বেশ সুনাম অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছেন প্রায় দু’হাজার দুঃস্থ ও বিধবা নারীরা। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি (এমসিসি)’র উদ্যোগে আগৈলঝাড়া উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রের নারীরা পরিত্যক্ত ডোবা কিংবা পুকুরের কচুরিপানা দিয়ে কাগজ এবং ওই কাগজদিয়ে তৈরি করছেন শুভ বড়দিনের সান্তা ক্লজ, ট্রি সাজানোর পন্যসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নানা উপহার সামগ্রী। ওই সংস্থার মাধ্যমে শৌখিন এসব খেলনা ও উপহার সামগ্রী ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হচ্ছে। এখানকার তৈরি করা কচুরিপানার ওইসব শৌখিন উপহার সামগ্রী সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। ফলে বিধবা ও দুঃস্থ নারীরা খুঁজে পেয়েছেন বেঁচে থাকার অবলম্বন। উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজে গেলে ওই গ্রামের মনি বালা (৪৮) বলেন, কচুরিপানা আর বড়দিন আমার জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। মনিবালা কচুরিপানার কাগজ দিয়ে তৈরি করা বড়দিনের সান্তা ক্লজসহ বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তৈরির সু-নিপুন কারিগরদের একজন। মনি বালার ন্যায় ওই এলাকার দু’হাজার অসহায় ও দুঃস্থ নারীরা এমসিসি’র আগৈলঝাড়ার ৫টি কেন্দ্রে কাজ করে সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। তিনি আরোও বলেন, ‘অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কোন একমতে খেয়ে না খেয়ে বেঁেচছিলাম। গত ৫বছর পূর্বে এমসিসি’র তত্বাবধানে আমি কচুরিপানা দিয়ে কাগজ বানিয়ে বড়দিনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহার ও খেলনা সামগ্রী তৈরি করে আজ তিনবেলা ভাত খেতে পারছি।’ তিনি বড়দিনের সান্তা ক্লজসহ ট্রি সাজানোর নানা পন্য সামগ্রী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের বাহারী উপহার ও খেলনা সামগ্রী তৈরির কাজ করছেন। মনি বালার আরেক সঙ্গী বিধবা বিনা হালদার (৫০) ও বিধবা শিউলী বেগম (৪৭) বলেন, ‘আমরা যেসব জিনিস তৈরি করছি, সেগুলো দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশ-বিদেশের খ্রীষ্টিয় সম্প্রদায়ের লোকজনে শুভ বড়দিন পালন করে আসছেন। প্রতিদিন একেকজন নারী শ্রমিকরা এখানে ৪ থেকে সাড়ে চার’শ টাকা আয় করছেন। জোবারপাড় এন্টার প্রাইজের ম্যানেজার পাপড়ী মন্ডল জানান, বর্তমানে প্রকল্পের ৫টি কেন্দ্রের প্রায় দুই হাজার নারী শ্রমিক কাজ করছেন। এদের মধ্যে অধিকাংশরাই হচ্ছেন স্বামী পরিত্যক্তা, বিধবা কিংবা অসহায় ও দুঃস্থ। তিনি আরো বলেন, উপজেলার জোবারপার এন্টারপ্রাইজ, কালুরপাড়ের বির্বতন, বড়মাগরার কেয়াপাম, নগরবাড়ির চ্যারিটি ফাউন্ডেশন ও বাগধা এন্টার প্রাইজে প্রতিবছরই নতুন নতুন নকশার কাজ করা হয়। বড়দিনের সান্তা ক্লজ সম্পর্কে জানতে চাইলে পাপড়ী মন্ডল ছোট্ট একটি পুতুল হাতে নিয়ে বলেন, আমাদের এখানে সান্তা আছে! তিনি আরো বলেন, এবছর দেশব্যাপী তাদের এখানকার কচুরিপানার কাগজের তৈরি সান্তা ক্লজসহ বড়দিনের অন্যান্য শৌখিন পন্য সামগ্রী বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।