অস্থির চালের বাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক : বোরো মৌসুম শেষ হয়েছে গত মাসেই। বাজারে এসেছে নতুন চাল। সংগত কারণেই চালের দাম কমবে। স্বস্তিতে থাকবেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু না। অর্থমন্ত্রীর সব হিসাব-নিকাশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চালের মূল্য তরতর করে এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। খাদ্যতালিকার অন্যতম প্রধান পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের দামটাও বেড়ে যাবে সমানুপাতিক হারে এবং এটাই স্বাভাবিক। কেননা এরা প্রত্যেকেই একে অপরের সঙ্গে নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। এ প্রান্তে ব্যথা অনুভূত হলে অপর প্রান্তে তার প্রতিফলন পাওয়া যায়। এ যেন অনেকটা ক্যানসারের মতো।

আমাদের দেশের খাদ্যতালিকায় চাল এখনো অন্যতম প্রধান খাদ্য। এর দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের সর্বত্রই দাম বেড়ে যাবে-এটাই স্বাভাবিক। আর এই স্বাভাকিকতার মাঝে আরো একটি স্বাভাবিকতা হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষরা দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ ঠিক রাখতে গিয়ে অন্যান্য খরচপাতিকে সংকুচিত করতে বাধ্য হন। অথবা অনেক সময় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। কথাগুলো বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।

বাক্য অসত্য নয়। পুরোটাই বিজ্ঞান। সুতরাং চালের দাম বাড়লে অবধারিতভাবে সমাজের ওপর এর একটা প্রভাব পড়ে। প্রভাবটা কষ্টের। বোরো ধান আসার পরও চালের দাম না কমা একটা আশঙ্কার বিষয়। খাদ্য মজুদও সর্বনিম্ন পর্যায়ে। টিসিবির হিসাবমতে, এক বছর আগে যে মোটা চাল পাওয়া যেত ৩০ টাকা কেজিতে, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে মোটা চালের দর ৪২ শতাংশ বেশি। সুতরাং সবক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ না ধরে গড়ে যদি ১০ শতাংশও ধরা হয়, তাহলে যে মানুষটির আয় ২০ হাজার টাকা, তাকে এখন ব্যয় করতে হচ্ছে ২২ হাজার। অতএব এই বাড়তি ২০০০ টাকার জোগান দিতে না পারায় তাকে কাপড় কেটে জামা ছোট করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে জীবনযাত্রার মান কমাতে হচ্ছে। এটাই আজকের বাস্তবতা।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেছেন, অন্যান্য বছর ধান চাষের সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয় না। এবার হয়েছে। ফলে আশানুরূপ ফলন হতে পারেনি। তাহলে সমস্যা মোকাবিলার পথ কী? আমরা মনে করি, মোকাবিলার সর্বোত্তম পথটির নাম মনিটরিং। মূল্যস্ফীতির যে সহনীয় চাপ আসার কথা সরকার বলছে, সেখানেও চালের কারণে একটি বড় চাপের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সুতরাং এ সময়ে সরকারকে কঠোর হাতে মধ্যস্বত্বভোগী, মিলার ও আড়তদারদের অধিক মুনাফা লাভের পথকে রুদ্ধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। একইসঙ্গে সরকারকে গতানুগতিক পথ পরিহার করে নতুন পথের সন্ধানে পা বাড়াতে হবে এবং তা খুবই কম সময়ের মধ্যে। আমরা তা এ জনবান্ধব সরকারের কাছে আশা করতেই পারি।