অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

অনলাইন ডেস্ক : সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের জন্য রবিবার (১৪ নভেম্বর) দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত আটটায় মাঠে নামবে দু’দল।

গত ছয় আসরে কোনবারই শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি এ আসরের দুই ফাইনালিষ্ট। তাই প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে মরিয়া দু’দলই।

এর আগে নিউজিল্যান্ড একবারও ফাইনালে খেলার সুযোগ না পেলেও দ্বিতীয়বারের মত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে নামছে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে ২০১০ সালে ফাইনালে উঠলেও শিরোপার স্বাদ নিতে পারেনি অজিরা। ইংল্যান্ডের কাছে সাত উইকেটে ম্যাচ হারে অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য এরপর আর ফাইনালের টিকিট পায়নি অজিরা।

সুপার টুয়েলভে পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জিতে আট পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্স-আপ হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছে ফিঞ্চের দল। সেমিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিপক্ষ ছিল অপ্রতিরোধ্য পাকিস্তান। সেমির ম্যাচের বেশিরভাগ সময়ই আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে পাকিস্তান। নিজেদের ও অস্ট্রেলিয়া ইনিংসের ১৫ ওভার পর্যন্ত চালকের আসনেই ছিল বাবর আজমরা। কিন্তু ১৬ থেকে ১৯ ওভারের মধ্যেই ম্যাচে মোড় ঘুরিয়ে দেয় অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটার মার্কাস স্টয়নিস ও ম্যাথু ওয়েড।

ষষ্ঠ উইকেটে ৪১ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮১ রানের জুটি গড়ে সেমির লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করেন দুই ব্যাটসম্যান। অথচ পাকিস্তানের ছুঁড়ে দেয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে ৯৬ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসেছিলো অস্ট্রেলিয়া। তবে এরপরেই পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন স্টয়নিস ও ওয়েড। তাতেই অস্ট্রেলিয়াকে শেষ হাসিতে রাঙ্গিয়েছেন। পাঁচ উইকেটের জয়ে ফাইনালে উঠে অজিরা।

৩১ বলে দু’টি চার-ছক্কায় অপরাজিত ৪০ রান করেন স্টয়নিস। ১৭ বলে দু’টি চার ও চারটি ছক্কায় ৪১ রানে অপরাজিত থকেন ওয়েড। এরমধ্যে তিনটি ছক্কা ওয়েড হাঁকিয়েছেন ইনিংসের ১৯তম ওভারের শেষ তিন বলেই। যাতেই নিশ্চিত হয় কাঙ্ক্ষিত জয়।

সেমিফাইনালে স্টয়নিস ও ওয়েডের পাশাপাশি কথা বলেছে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটও। ৩০ বলে তিনটি করে চার-ছক্কায় ৪৯ রান করেছিলেন ওয়ার্নার। এ ইনিংসের মাধ্যমে এবারের আসরে এ পর্যন্ত ছয় ইনিংসে ২৩৬ রান করেন এ ওপেনার। ফাইনালের মঞ্চে আরও একবার ওয়ার্নারের জ্বলে ওঠার অপেক্ষায় থাকবে অস্ট্রেলিয়া।

অন্যদিকে, সেমিতে খালি হাতে ফিরলেও চলতি আসরে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩০ রান অধিনায়ক ফিঞ্চেরই। তবে এখনো বিশ্বকাপে জ্বলে উঠতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। ছয় ইনিংসে স্মিথ ৬৯ রান ও ম্যাক্সওয়েল ৩৬ রান করেছেন এ পর্যন্ত।

বোলিং বিভাগে এবারের আসরে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলার স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। শেষ চারেও নিজের পারফরমেন্স অব্যাহত রাখেন এই লেগি। চার ওভারে ২২ রানে এক উইকেট নেন জাম্পা। এ পর্যন্ত ছয় ইনিংসে তার শিকার ১২টি উইকেট। এছাড়া এ পর্যন্ত দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ৯টি ও জশ হ্যাজেলউড ৮টি উইকেট নিয়েছেন। দলের আরেক সেরা পেসার প্যাট কামিন্স, এখনও ফ্লপ। ছয় ইনিংসে মাত্র পাঁচ উইকেট তার। ফাইনালে জাম্পা-স্টার্ক-হ্যাজেলউডের সাথে কামিন্স জ্বলে উঠতে পারলে, প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের বিপদে পড়তে হবে।

এদিকে, নিউজিল্যান্ডকে সমীহ করলেও ফাইনাল জিততে চান অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। তিনি বলেন, ‘এটি ফাইনাল ম্যাচ। আর প্রতিপক্ষ হিসেবে নিউজিল্যান্ড অনেক ক্যালকুলেটিভ দল। তারা অনেক পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নামবে। আমাদের সেভাবেই প্রস্তুত থাকতে হবে। যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ফাইনাল জিততে হবে এবং প্রথমবারের মত শিরোপার স্বাদ নিতে হবে।’

নিউজিল্যান্ডকে শক্তিশালী ও পরিকল্পিত দল মনে করেন ফিঞ্চ। প্রতিপক্ষ অধিনায়কের সেই মন্তব্যের প্রতিফলন সুপার টুয়েলভ ও সেমিফাইনালেই দেখিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

সুপার টুয়েলভে পাকিস্তানের কাছে শেষ মুহূর্তে হেরে বসলেও, ম্যাচে নিজেদের সেরাটাই ঢেলে দেয় নিউজিল্যান্ড। ভারতকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর পর, আফগানিস্তান-স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষেও জয় তুলে নেয় কিউইরা। পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে আট পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ প্রতিপক্ষ হিসেবে নিউজিল্যান্ড পায় শিরোপার অন্যতম দাবীদার ইংল্যাডকে।

ওপেনার ড্যারিল মিচেল ও জেমস নিশামের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ইংল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারায় নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে চার উইকেটে ১৬৬ রান করেছিলো মরগ্যানের দল। সেই রানকে টপকাতে নেমে অবশ্য শুরুতেই ব্যাকফুটে চলে যায় নিউজিল্যান্ড। ১৩ রানের মধ্যে মার্টিন গাপ্টিল ও উইলিয়ামসনের উইকেট হারায় কিউইরা।

শুরুর ধাক্কাটা পরবর্তীতে কাটিয়ে ওঠেন মিচেল ও ডেভন কনওয়ে। ৬৭ বলে ৮২ রানের জুটি গড়েন তারা। ৩৮ বলে ৪৬ রান করে থামেন কনওয়ে। এরপর ব্যাট হাতে দ্রুত রান তুলে নিউজিল্যান্ডকে লড়াইয়ে ফেরান ১১ বলে ২৭ রান করা নিশাম। আর ১৯তম ওভার পর্যন্ত ক্রিজে থেকে নিউজিল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন এবারের আসরে মেইকশিপ্ট ওপেনার হিসেবে খেলা মিচেল। শেষ চারের ম্যাচে অপরাজিত ৭২ রান করে নিউজিল্যান্ডকে প্রথমবারের মত ফাইনালে তোলেন এ ব্যাটসম্যান।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এবারই প্রথম ফাইনাল খেলছে নিউজিল্যান্ড। আগের ছয় আসরে কিউইদের সর্বোচ্চ সাফল্য ছিলো সেমিফাইনাল। ২০০৭ ও ২০১৬ সালের আসরে সেমিতে খেললেও ফাইনালে খেলার সুযোগ এবারই প্রথম হলো কিউয়িদের।

আর প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠেই বাজিমাত করতে চায় নিউজিল্যান্ড। দলের অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বলেন, ‘ওয়ানডে বিশ্বকাপে শেষ দুই আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এই প্রথম ফাইনাল খেলছি আমরা। শিরোপা জিতে এই প্রথমবারকেই স্মরণীয় করতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার মত দলের বিপক্ষে জিততে হলে, তিন বিভাগেই তাদের চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। ম্যাচের শুরু থেকেই অজিদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’

এ পর্যন্ত পুরো আসরেই নিউজিল্যান্ডের ব্যাটার ও বোলাররা ভাল পারফরমেন্স করেছে। দলের সেরা ব্যাটাররা রানের মধ্যেই আছেন। আসরে মিচেল ১৯৭, গাপ্টিল ১৮০, উইলিয়ামসন ১৩১ ও কনওয়ে ১২৯ রান করেছেন। তবে ফাইনালের মঞ্চে কনওয়ের সার্ভিস পাবে না নিউজিল্যান্ড। নিজের ভুলে হাত ভেঙে ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েন উইকেটকীপার এ ব্যাটার।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪তম ওভারে আউট হয়ে হতাশায় নিজের ব্যাটে হাত দিয়ে আঘাত করে হাতটাই ভেঙে ফেলেন কনওয়ে। ফলে বিশ্বকাপের ফাইনালে তাকে পাচ্ছে না নিউজিল্যান্ড। ফাইনালের আগে কনওয়েকে হারানোটা বড় ধাক্কা মনে করছেন নিউজিল্যান্ড কোচ গ্যারি স্টিড।

তিনি বলেন, ‘এমন সময় তার ছিটকে পড়াটা হতাশার। তাকে আমরা মিস করবো। তবে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’

এদিকে, নিউজিল্যান্ডের বোলিং বিভাগকে দারুণভাবে সামাল দিচ্ছেন দুই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও টিম সাউদি। টুর্নামেন্টে এ পর্যন্ত বোল্ট ১১টি ও সাউদি আটটি উইকেট শিকার করেছেন। স্পিন বিভাগে দারুণ ফর্মে আছেন ইশ সোধিও। ৯ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্পিন ঘূর্ণিতে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারদর্শী সোধি। তাই ব্যাটার ও বোলারদের সম্বনয়ে ফাইনালের মঞ্চে আরও একটা শিরোপা জয়ের স্বপ্নই দেখছে নিউজিল্যান্ড।

এ বছরই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিলো কিউইরা। তবে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম শিরোপার স্বপ্ন কিউয়িদের বুকে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অবশ্য নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়াই। ১৪ ম্যাাচে মুখোমুখি হয়ে ৯ বার জিতেছে অজিরা। আর পাঁচটি জয় কিউয়িদের। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে একবারের দেখায় জয় পেয়েছিলো নিউজিল্যান্ডই। ২০১৬ সালে সুপার টেনে গ্রুপ-দুই এর ম্যাচে আট রানে জিতেছিলো কিউয়িরা।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতেই সর্বশেষ দেখা হয়েছিলো নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার। নিউজিল্যান্ড সফরে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটি ৩-২ ব্যবধানে জিতে নেয় অজিরা।

অস্ট্রেলিয়া একাদশ (সম্ভাব্য) :

ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা, জশ হ্যাজলউড।

নিউজিল্যান্ড একাদশ (সম্ভাব্য) :

মার্টিন গাপ্টিল, ড্যারিল মিচেল, কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), টিম সেইফার্ট (উইকেটরক্ষক), গ্লেন ফিলিপস, জেমস নিশাম, মিচেল স্যান্টনার, টিম সাউদি, অ্যাডাম মিলনে, ট্রেন্ট বোল্ট, ইশ সোধি।